যৌন হয়রানির অভিযোগে জাবি শিক্ষককে কফিশপে ডেকে মারধর
যৌন হয়রানির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে কপিশপে ডেকে মারধর করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মারধরের শিকার মো. আতিকুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। একই সঙ্গে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনার পর আতিকুর রহমানকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার একটি ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, শিক্ষক আতিকুরকে গালাগাল দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা ও তিনি ক্ষমা চাচ্ছেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থী ম্যাথ বুঝতে শিক্ষক আতিকুরের কাছে গেলে তিনি মেয়েটিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিদ্যালয়ে গিয়ে শিখতে বলেন। সে শিক্ষার্থী বিষয়টি এড়িয়ে গেলে আতিকুর তাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন, মধ্যরাতে কল করেন। ছাত্রীটি টিউশনির কথা জানিয়ে এড়াতে চাইলে আতিকুর তাকে নানাভাবে জোর করতে থাকেন। আইফোন কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখান।
পরে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের ঘটনাটি জানিয়ে তাদের পরামর্শে শিক্ষক আতিকুরকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যারাবিকা কফিশপে দেখা করতে বলেন। আতিকুর কপিশপে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে ফেলে। এসময় তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। তারা আরও দাবি করেন, ঘটনা মীমাংসার জন্য শিক্ষক আতিকুর শিক্ষার্থীদের এক লাখ টাকা দিতে চেয়েছেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। এরপর আতিকুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে এ বিষয়ে প্রক্টর অফিসের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন- সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই হবে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা
ছাত্রীকে উত্যক্তের অভিযোগ অস্বীকার করে আতিকুর রহমান দাবি করেন, ওই ছাত্রী তাকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। তিনি বলেন, প্রথমে ইমোতে রমাদান মোবারক লিখে মেসেজ পাঠায় ছাত্রীটি। আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতো। পরে ফেসবুকেও যুক্ত হয়। বারবার কল দিয়ে তাকে পড়ানোর জন্য বলে। আমি তাকে জানিয়ে দেই, পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আমি আর এনএসইউ যাব না। আমি জাহাঙ্গীরনগর থাকব। আপনি পড়তে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর আসেন। ছাত্রীকে মাঝরাতে হয়রানি ও আইফোনের প্রলোভন দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন এ শিক্ষক।
আরও পড়ুন- যে শিক্ষার্থীরা জেল খাটিয়েছে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন হৃদয় মণ্ডল
আতিকুর রহমান বলেন, ওই ছাত্রীর পীড়াপীড়িতে কপিশপে পড়ানোর জন্য রাজি হই। সেখানে গেলে ওরা আমাকে মারধর করে। মানিব্যাগে থাকা ১১/১২ হাজার টাকা ও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যায়। ক্যারিয়ার শেষ করার হুমকি দিয়ে ১ লাখ টাকা চায়। তখন আমি নিরুপায় হয়ে বলেছি ৫০ হাজার টাকা দিতে পারবো। তখন তাদের একজন বলে ১ লাখই দিতে হবে। আমি রাজি হলে এক পর্যায়ে সে অন্যদের তা জানায়। তখন অরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, তাদের ৫ লাখ টাকা লাগবে। এরপর আমাকে প্রক্টর অফিসে নেয় তারা। সেখান থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়। নিজেকে প্রতারণার শিকার দাবি করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।