ঘুম থেকে উঠেই রুহির প্রশ্ন—মা কোথায়, স্কুলে যাব তো
মা রাফিকা পাঠানের সঙ্গে ৮ বছরের মারিয়াম রুহি প্রতিদিন সকালে রিকশায় চড়ে স্কুলে যেত। কিন্ত কয়েক দিন ধরে মা আর স্কুলে নিয়ে যায় না। রুহির সঙ্গে কথাও বলে না। মা যে কখনোই তাকে স্কুলে নিয়ে যাবেন না, তা এখনো বিশ্বাস হয়নি রুহির। গত সোমবার রুহিকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন রাফিকা পাঠান। পথে ওয়ারীর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের সামনে তাদের রিকশাকে ধাক্কা দিলে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান রাফিকা।
রুহিও আহত হয়। এরপর থেকে সে আর স্কুলে যেতে পারছে না মায়ের সঙ্গে। সে টিকাটুলীর কামরুন্নেসা গার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।পুরান ঢাকার বাসায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুহির চাচা শামীম পারভেজ ছেঁড়া ও রক্তমাখা স্কুলড্রেস দেখিয়ে বলেন, ‘চোখের সামনেই মায়ের মৃত্যুটা দেখেছে রুহি। রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে ওর স্কুল ড্রেস ছিঁড়ে গেছে। সে ভাবছিল, ওর যেহেতু কিছু হয়নি- মায়েরও আর কিছু হবে না।’
তবে ধীরে ধীরে রুহি বুঝতে পারছে, মায়ের কিছু হয়েছে। তার মায়ের দাফনের সময় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। স্বজনেরা তাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে রাখেন। মায়ের দাফনের সময় গিয়ে গ্রামেই আছে রুহি। সেখান থেকেই তার আবদার স্কুলে যাবে। ঘুম থেকে উঠে বাবাকে বলে, ‘মা কোথায়, ঘুম থেকে ওঠে না কেন? স্কুলে যাব তো।’
কথাগুলো জানিয়ে ফোনে কাঁদছিলেন রুহির বাবা আবু সুফিয়ান পাভেল। তিনি বলেন, ‘মেয়েটাকে বলা হয়েছে, ওর মা আর আসবে না, স্কুলে যাবে না। কিন্তু মেয়েটি তা বিশ্বাস করছে না। কবরের পাশে চলে যাচ্ছে দৌড়ে, মা মা বলে ডাকছে।’
আরও পড়ুন: দুই মেয়ের সামনে মায়ের মৃত্যু, কে কাকে সান্ত্বনা দেবে?
দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই ফ্রিজ বিক্রির দোকানের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আনন্দ পরিবহনের বাসটি গুলিস্তানে যাচ্ছিল। বাসটির সামনের বাম্পারে দুটি রিকশাকে টেনে চলছিল। মা-মেয়েকে বহনকারী রিকশাকেও ধাক্কা দিয়ে দিল। দুজন ছিটকে পড়লে ছাত্রীটি বাম পাশে নিরাপদে থাকে। তবে ওর মা চাকা আর বাম্পারে আটকে যায়। পিষ্ট হয়ে মাথার মগজও বেরিয়ে যায়। কয়েকজন মিলে বাসটি ঠেলে তাকে বের করেন।’
এ বিষয়ে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আনন্দ পরিবহনের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক সুমন বেপারিকে মারধরও করেছে লোকজন। তার বিরুদ্ধে নিহতের দেবর শামীম পারভেজ মামলা করেছেন।’
শামীম পারভেজ বলেন, ‘বাসটির ব্রেকে ঝামেলা ছিল বলে জানা গেছে। চালক ও হেলপারের পাশাপাশি মালিকের বিরুদ্ধেও মামলা করতে চেয়েছিলেন। তবে নাম-ঠিকানা না পাওয়ার কথা বলে তাকে আসামি করেনি পুলিশ।’