জাপা নেতার বাসায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষা!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৫৪ AM , আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:১৬ PM
সম্প্রতি এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক মহাসচিবের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়।
জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বাসায় ঝাটরা জালিশা হাসানিয়া দ্বিমুখী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় পর্যায়ে চলছে সমালোচনা। রুহুল আমিন হাওলাদার ওই মাদ্ররাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। ওই পদে নিয়োগপ্রত্যাশী এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
শনিবার বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌর শহরে সভাপতির বাসভবন 'পল্লী ভবন'-এ দুমকির ঝাটরা জালিশা হাসানিয়া দ্বিমুখী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে এই নিয়োগ পরীক্ষা হয়। মাদরাসা থেকে সভাপতির বাসার দূরত্ব কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার।
সভাপতির বাসায় পরীক্ষা নেওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রত্যাশী আব্দুস শাকুর। তিনি ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে জানানো হয়, 'কালামের চাকরি হবে। তিনি সব ম্যানেজ করেছেন'।
আব্দুস শাকুর জানান, তিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সন্তোষপুর নেছারিয়া (ফাজিল) ডিগ্রি মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে কর্মরত। নিজ জেলায় চাকরি করার জন্য তিনি দুমকির ঝাটরা জালিশা হাসানিয়া দ্বিমুখী ফাজিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেছিলেন।
সভাপতির বাসায় নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঝাটরা জালিশা হাসানিয়া দ্বিমুখী ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল বারী বলেন, সভাপতি তার বাসায় করছেন, এ ক্ষেত্রে কী করার আছে।
দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদী বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে একটি অভিযোগ পেয়ে ঝাটরা মাদ্রাসায় লোক পাঠিয়েছি। কিন্তু কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। নিয়োগ পরীক্ষা সভাপতির বাসভবনে হওয়া ঠিক নয়। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হয়ে আসা উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা অবশ্যই সংশ্নিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হওয়া উচিত। ঝাটরা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কোন প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে, তা তিনি জানেন না। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক ড. জাবেদ আহমেদ জানান, প্রার্থীরা তাকে ফোনে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের কথা জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগও পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, বাসায় কোনো নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার নিয়ম নেই। সার্বিক বিষয়ে তারা উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেবেন।
ঝাটরা জালিশা হাসানিয়া দ্বিমুখী ফাজিল মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, যে কোনো স্থানে নিয়োগ পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার বৈধতা নিয়োগবিধিতে আছে। এসব আইনি বিষয় নিশ্চিত হয়ে বাসায় নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছি। দু'জন সরকারি প্রতিনিধিসহ পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ডও এতে সম্মতি দিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ ওঠায় অন্যত্র পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও নিয়োগ বোর্ড রাজি হয়নি।
রুহুল আমিন হাওলাদার উল্টো অভিযোগ করেন, যিনি (নামোল্লেখ না করে) এসব অভিযোগ তুলেছেন, তাকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার চিঠি এবং এসএমএস দেওয়া হলেও আসেননি।