করোনাকালে আত্মঘাতী ১৪৮ ছাত্রছাত্রী

আত্মহত্যাকারীদের কয়েকজন
আত্মহত্যাকারীদের কয়েকজন   © টিডিসি ফটো

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘরবন্দি এই সময়ে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে প্রায় দেড়শ’ শিক্ষার্থী। পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত টানাপোড়েন, আর্থিক সংকট, বেকারত্ব, নি:সঙ্গতা, মানসিক চাপ, তীব্র বিষন্নতা— এসব আত্মহত্যার মূল কারণ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সংবাদকর্মীদের তৈরি এক পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে  সর্বশেষ ২ জুন (বুধবার) ১৪৮ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে ৭১ জন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী। ৩৮ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। সর্বশেষ গত ৩১ মে এ মিছিলে যুক্ত হন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ফারহানুজ্জামান রাকিন। 

স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছাড়াও করোনাকালে কলেজে পড়ুয়া ২৭ জন, মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া ৩ জন এবং ৯ জন মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীও রয়েছে আত্মহত্যার এই মিছিলে । 

আরও পড়ুন: করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলের ৪০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের মার্চ  মাসে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে গত ২ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর মানসিক চাপ কাজ করছে। দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা ও মানসিক বিপর্যয়সহ নানান ছোটখাটো সমস্যায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে তারা আত্নহননের সিদ্ধান্তে ধাবিত হতে বাধ্য হয়েছেন। তবে পরিবারের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন, সচেতনতা সৃষ্টিসহ তরুণদের অনুকূলে পরিবেশ গড়তে পারলে আত্নহত্যা প্রবণতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। 

সম্প্রতি তরুণদের একটি সংগঠনের জরিপে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। আঁচল ফাউন্ডেশন নামে ওই সংগঠনটি বলছে, পারিবারিক, সম্পর্কজনিত, আর্থিক, পড়াশোনা এবং অন্যান্য বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। 

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহননকারী হচ্ছেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা, ৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন বলেন, আত্নহত্যা মূলত একটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত; যে আত্নহত্যা করবে সেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ কেউ হয়তো আগে থেকেই অনেক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে থাকতে পারে। যখন এই যন্ত্রণাগুলো পরিমাণে বেশি হয় কিংবা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায় যেটাকে আমরা বলি 'তীব্র মনোবেদনা'।

“এটি যখন সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় অর্থাৎ ব্যক্তি মনে করতে পারে আমার বেঁচে থেকে লাভ নেই,নিজেকে মূল্যহীন মনে করে। এভাবে অনেকগুলো মানসিক সমস্যা যখন একত্রিত হয় মনোজগৎকে নাড়া দেয় কিংবা আন্দোলিত করে তখন ব্যক্তি আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা নেয়। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা মানসিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন ফলে আত্নহত্যাও বেড়েছে।”

তিনি আরও বলেন,আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ক্ষেত্র কাজ করে। ব্যক্তি বিশেষে ক্ষেত্রগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন ব্যক্তির যখন নৈতিক মূল্যবোধ একেবারে ফুরিয়ে যায় তখনই সে আত্নহননের পথ বেছে নেয়। আত্নহত্যা মহাপাপ জেনে ও ব্যক্তি তখন আত্নহত্যা করে।

“এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।একটি শিশু তার পরিবার থেকে কি ধরনের মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠছে সেই মূল্যবোধগুলো আঁকড়ে ধরে কিন্তু শিশুকে ভবিষ্যতে পরিচালিত করবে৷বাবা-মা কর্তৃক গৃহীত আদর্শ শিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

আরও পড়ুন: হতাশায় নোবিপ্রবি ছাত্রের আত্মহত্যা

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমি শঙ্কিত। যে হারে মানসিক সমস্যা বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না সচেতনতা। যে কারো আত্মহত্যা করার পেছনে আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশেরও দায় রয়েছে। একটা মানুষ কেনো আত্মহত্যা করে তা নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ করা দরকার। আত্মহত্যা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই দেশের নীতিনির্ধারকসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মত তার।

এক বছরে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ৯৫ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
পরিসংখ্যান বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি আত্নহত্যা করেছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ২০২০ সালের মে মাস থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছে ৬২ জন, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ২৪ জন এবং মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছে ৯ জন। আত্নহননকারী এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের বয়স ১২ থেকে ২০ বছর। তাছাড়া গত মে মাসেও আত্মহত্যা করেছে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ১৮ শিক্ষার্থী।

চলতি জুনের শুরুতে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
গত ১ জুন পাবনার সাঁথিয়ায় ইয়াসমিন (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রী অভিমান করে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের চক নন্দনপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। ইয়াসমিন সাঁথিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও ইউসুফ আলীর মেয়ে বলে জানা গেছে।

স্মার্টফোন কিনে না দেওয়ায় ২ জুন অভিমানে রানা মিয়া (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা পুলেরপাড়ের চন্দ্রখানা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোর ওই গ্রামের কৃষক নাছির উদ্দিনের ছেলে। সে ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

করোনার শুরুতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া আরও ১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
পারিবারিক কলহের জেরে গত বছরের ২১ মার্চ জামালপুর দেওয়ানগঞ্জে উত্তর মোয়ামারীর চেংটিমারী গ্রামের মেঘলা আক্তার (১৫) নামে এক ছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। সে একই গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে এবং পাথরের চর দ্বীপশিখা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী। 

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে অভিমান করে ২২ মার্চ গলায় ফাঁস দিয়ে মীম (১৪) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। ঘিওর উপজেলার ঘিওর সিনিয়র মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া দৌলতপুর উপজেলার খলসী ইউনিয়নের বিষমপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়ার বড় মেয়ে ছিল মীম (১৪) । পারিবারিক অভিমানের কারনেই সে তার গলায় ওড়না দিয়ে ঘরের ধরনার সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

বরিশালে আফরীন (১৭) নামে বিএম কলেজের এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ২৭ মার্চ রাত সোয়া ১১টায় নগরীর জিয়া সড়কের মদিনা মসজিদসংলগ্ন ভূইয়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আফরিন ওই এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সালাম ভূইয়ার মেয়ে। পরিবারের সদস্যরা জানান, আফরিন অনেক দিন যাবত মানসিক সমস্যায় ভুগছিল।

২ এপ্রিল নড়াইলের লোহাগড়ায় একজন প্রবাসীর ফেসবুক আইডি থেকে ইতনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী লায়লা খানমের (১৫) আপত্তিকর ছবি পোস্ট করায় এবং তা ভাইরাল হওয়ার জের ধরে ওই স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার দিন উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের ধলইতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে । 

প্রেমের জেরে ৩ এপ্রিল রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় পরিবারের অগোচরে নিজের কক্ষে জান্নাতুল (১৫) নামে এক কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) উপজেলার ভাইবোনছড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোরী ওই এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের মেয়ে এবং এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। স্থানীয় এক কিশোরের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের জেরে এ আত্মহত্যা।

৬ এপ্রিল নওগাঁ সদর উপজেলায় সুমাইয়া আক্তার (১৪) নামে এক কিশোরীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। এসময় কিশোরীর পরিবারের অন্য সদস্যরা বাহিরে ছিল।ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার আদম দুর্গাপুর পূর্ব পাড়ায়। নিহত সুমাইয়া আদমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। 

রাজশাহীর পুঠিয়ায় জুসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ইভা খাতুন (১২) নামের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তার দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে। পরে লোকলজ্জার ভয়ে ঘরের তীরের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করেছে ওই কিশোরী।

মৃত ইভা খাতুন উপজেলার রামজীবনপুর গ্রামের ভ্যান চালক সেলিম হোসেনের মেয়ে ও পুঠিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। ১০ এপ্রিল  দুপুরে তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

১৯ এপ্রিল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পৃথক স্থান থেকে পারভিন আক্তার (১২) নামে এক স্কুলছাত্রী ও আব্দুল আজিম (২০) নামে এক কলেজছাত্র আত্মহত্যা করেছে।

নিহতরা হচ্ছেন, চরএলাহি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড গাংচিল গ্রামের ওমান প্রবাসী আব্দুল গফুরের মেয়ে ও স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি ছাত্রী পারভিন আক্তার এবং সিরাজপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মোহম্মদনগর গ্রামের মাহমুদুল হকের ছেলে ও সরকারি মুজিব কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আজিম।

ফেনীতে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ২০ এপ্রিল সকালে পরিবারের সাথে অভিমান করে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে আয়েশা আক্তার (১৫) নামের এক স্কুল ছাত্রী। আয়েশা উত্তর শিবপুর উজির আলী ভুঁইয়া বাড়ির মো: হানিফের ছোট মেয়ে। সে শহীদ মেজর সালাউদ্দিন (বীর উত্তম) উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বাচ্চারা ছোট ছোট কারণেই আত্নহত্যা করছে। দেখা যায়, অধিকাংশ বাচ্চাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। বাচ্চাদের এখন শাসন করতেও ভয় হয়। কারণ কখন কি করে বসে! আত্নহত্যার ঘটনা থামাতে অভিভাবক সহ সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ বাচ্চাদের বুঝাতে হবে তাদের ভালো-মন্দ।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাগরের মা তাপসী বলেন, দীর্ঘ ছুটিতে অনেক শিক্ষার্থী ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উঠছে। নানান নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও অভ্যাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা৷ একটু শাসন করলেই আত্নহত্যা করে বসছে। সংকটকালীন সময়ে বাচ্চাদের বুঝাতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এসময় পরিবারের সহযোগিতামূলক আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসেও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ১৮ শিক্ষার্থী আত্নহত্যার মিছিলে পা দিয়েছে। গত ১ মে মিরসরাইয়ে মায়ের সাথে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে রাফিয়া সুলতানা চাঁদনি (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। চাঁদনি ওই গ্রামের মোজাম্মেল হক প্রকাশ মহরম আলীর মেয়ে এবং স্থানীয় পাঞ্জুবের নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। জানা গেছে, চাঁদনীকে তার এক সহপাঠীর প্রেমের বিষয়ে ওই ছাত্রীর মা জিজ্ঞেস করে। এতে চাঁদনী হ্যাঁ বলায় বান্ধবীর সাথে চাঁদনীর ঝগড়া হয়। পরবর্তীতে চাঁদনীকে বান্ধবীর প্রেমের বিষয়ে সাক্ষী দেওয়ায় বকাঝকা করে তার মা। এতে অভিমান করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে চাঁদনী।

গত ৭ মে সুনামগঞ্জ জেলায় জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের হাড়গ্রামের নরেশ দাসের কলেজ পড়ুয়া সুমা দাস (১৮) পরিবারের লোকজনের অগোচরে ঘরের একটি কক্ষের তীরের সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে।

গত ৯ মে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় লকডাউনের কারণে স্কুলের ক্লাসে যেতে না পারার ক্ষোভে সাগর বড়ুয়া (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। একই দিনে রংপুরে ইদের জামা কিনে না দেওয়ায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিশু(১১) আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

গত ১২ মে কুষ্টিয়ায় ঈদের কেনাকাটা করার জন্য টাকা না পাওয়ায় রত্না খাতুন (১৪) নামের দশম শ্রেণীর এক স্কুল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা। গত ১৬ মে রাজশাহীতে আব্দুল আলিম (১৮) নামে এক স্কুল ছাত্র প্রেমঘটিত কারণে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

গত ২১ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ধরমন্ডল এলাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে ফাহিমা আক্তার (১৫) নামের এক স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। একই দিনে চাঁদপুরে স্মার্টফোনে 'ফ্রি ফায়ার' গেম খেলার জন্য ইন্টারনেট কেনার টাকা না পেয়ে মামুন (১৪) নামের এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া একই দিনে টাংগাইলের সখিপুরে প্রেমঘটিত কারণে কলেজ শিক্ষার্থী তন্নী আক্তার রুপা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে

গত ২৪ মে বগুড়ায় স্মার্টফোনে ‘ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে না দেওয়ায় চিরকুট লিখে উম্মে হাবিবা বর্ষা (১২) নামে এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বর্ষা চিরকুটে লেখেন, ‘বাবা-মা আমাকে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতে দিত না। বকাঝকা করতো। তাই আমি চলে গেলাম। আমাকে আর বকাঝকা করতে হবে না’।

গত ২৫ মে রাজধানীর সবুজবাগ থানার বাসাবোর মায়াকানন এলাকায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে১৩ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনি আক্তার।

গত ২৮ মে চট্টগ্রামের বন্দর থানাধীন আজাদ কলোনি এলাকায় প্রেমের ফাদেঁ ফেলে বিয়ের প্রলোবন দেখিয়ে কলেজ পরুয়া ছেলে সিমান্ত বিশ্বাস অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুললে উপায়ন্ত না পেয়ে ছেলেকে বিয়ের কথা বললে রাজি না হওয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এসএসসি পরিক্ষার্থী সুমনা মন্ডল (১৪) আত্নহত্যা করেছে।

একই দিনে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নুপুর মন্ডল (১৮) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছে। মৃত নুপুর কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী মহাদেব মন্ডলের কণ্যা। মৃত শিক্ষার্থীর আত্নহত্যার কারন জানা যায়নি।

গত ২৯ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে সাদিয়া (১৫) নামের একজন স্কুল শিক্ষার্থী মানসিক কষ্টে আত্মহত্যা করেছে। একই দিনে কুমিল্লা লাকসাম উপজেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে ফয়সাল (১০) নামে এক শিশু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

গত ৩০ মে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় মোবাইল গেম খেলতে না দেওয়ায় অভিমানে গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে রাফি নামের অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্র আত্মহত্যা করেছে।

একই দিনে রাজধানীতে বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে ফাতেমা আক্তার (১৭) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

সর্বশেষ গত ৩১ মে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে গলায় ফাঁস দিয়ে লিজা আক্তার (২০) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছে। লিজা আক্তার ওই এলাকার বাবুল মিয়ার মেয়ে।

আত্মহত্যা মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৩৮ শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৩৮ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। সবশেষ গত ৩১ মে আত্মহত্যা করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ফারহানুজ্জামান রাকিন। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ থেকে তার এই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বলে ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের। তিনি নোবিপ্রবি কৃষি বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী।

এই আত্মহত্যার মিছিলে সবচেয়ে বেশি ঢাবির। সর্বশেষ গত ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমান মাদক সেবর করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা হিসেবে তার মৃত্যু হয়। গত ২৩ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে হাফিজুরের ভাই তার লাশ শনাক্ত করেন।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সকালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম সিয়াম, ২৫ ডিসেম্বর গলায় ফাঁস লাগিয়ে পুষ্টিবিজ্ঞানের সাবেক ছাত্রী রুমানা ইয়াসমিন; ১২ নভেম্বর আইবিএ এর ছাত্র অনিন্দ ইশরাক; ২৪ সেপ্টেম্বর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক ছাত্র জাকারিয়া বিন হক শুভ, ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফার্মগেটের একটি আবাসিক হোটেল থেকে কামরুল বাহার নামে ঢাবির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করেন।

আত্মহত্যার মিছিলে আরও রয়েছে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-২০০৬ সেশনের শিক্ষার্থী আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইমাম হোসাইন, ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ফারিহা তাবাসসুম রুম্পা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে পড়ুয়া রুম্পা, চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী শুভজ্যোতি মন্ডল, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন ও দর্শন বিভাগে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তরুণ সেন।

আত্মহত্যার মিছিলে শাবিপ্রবির ৪ শিক্ষার্থী
গত ৬ মে মধ্যরাতে নিজ বাসার পাশে আমগাছের ডালের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের ছাত্র আলমগীর কবির। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছাত্র তৌহিদুল আলম প্রত্যয়, ৩০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বগুড়ার নিজ গ্রামের বাসায় আছিয়া আক্তার নামে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, ৬ আগস্ট বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী তোরাবি বিনতে হক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

রাবির দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাসসিরা তাহসিন নামে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার দিনে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর এলাকার একটি ছাত্রীনিবাস থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। আত্মহত্যার আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দেন তিনি। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর দেবজ্যোতি বসাক পার্থ নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

চবি দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
গত ৫ মার্চ রাত তিনটার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুল হাসান। তিনি চবির রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ছাত্র ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন। গত বছরের ২০ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগরীর দেওয়ানবাজার এলাকায় নিজ বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নীলম ধর অর্পা (২৩) নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। অর্পা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে খুবি দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আফসানা আফরিন সুমি (১৯)। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। এর আগে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম।

ড্যাফোডিলের দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
বিয়ের দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ায় প্রেমিকার বাড়িতে এসে বিষ পান করে গত ২৪ এপ্রিল আসাদুজ্জামান জলিল নামের এক ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে গত বছরের ১০ জুন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী রবীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (২২) ও তাঁর মা সরস্বতী বর্মণ (৪৭) বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

বিইউবিটির দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
গত ১৯ মে রাজধানীর একটি বাসা থেকে মাহমুদুল হক নামে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি। এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর নির্মাণাধীন ৯ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে জান্নাতুল হাসিন নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বশেমুরবিপ্রবি দুই ছাত্রীর আত্মহত্যা
১০ জুলাই পারিবারিক কলহের জেরে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাদিয়া কুতুব নামের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১১ অক্টোবর মনীষা হিরা নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। হিরা ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আত্মহত্যার মিছিলে প্রেমিকযুগল
গত ১ আগস্ট সুপ্রিয়া দাস নামের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি গণিত বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টায় ফারিদপুরের নিজ বাসায় তিনি আত্মহত্যা করেন। এর আগে ১৫ জুন সুপ্রিয়ার প্রেমিক তপু মজুমদার আত্মহত্যা করে। তার সহপাঠীরা জানান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রাক্তন ছাত্র তপু মজুমদারের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুপ্রিয়ার। দুজনের বাসা একই এলাকায়।

অভিমানে গলায় ফাঁস ইবির দুই ছাত্রীর
গত ২ জানুয়ারি পারিবারিক কলহের জেরে অভিমান করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাবিহা সুহা আত্মহত্যা করেছেন। সুহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়তেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ২ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উলফাত আরা তিন্নি।

আরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
গত ৯ নভেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্রী জুলহাস সিলভিয়া নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। ১৩ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় খন্দকার ফাকিহা নুর (২২) নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমন রায় সিধু আত্মহত্যা করেন। জানা গেছে, পরিবারের অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে সুমন দীর্ঘদিন থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।

গত বছরের ৩ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা এলিন ফুজি আত্মহত্যা করেন। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার জাদুঘর মোড় এলাকায় ওই ছাত্রী তার এক বান্ধবীর মেসে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে।

ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের কলাবাগান শাখা থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির মালেশিয়া শাখায় পড়ালেখা করছিলেন তাজরিন মোস্তফা মৌমিতা। গতবছর করোনার কারণে দেশে আসেন। অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস করছিলেন তিনি। থাকতেন পরিবারের সঙ্গে ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সাততলা ভবনটির ছাদে ওঠেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরিবার জানতে পারে, মৌমিতা ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন।

মেডিকেলের ৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
গত ২২ মার্চ অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে লুৎফর রহমান (২৭) নামে রাজশাহীতে এক চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত মার্চে নিজ দেশে ফিরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে (সাবেক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ) অধ্যয়নরত এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যা করা ওই শিক্ষার্থীর নাম মোওসা আবু জামি (২৩)। তিনি কলেজের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২২ জানুয়ারি রাত রাজশাহীতে ইকবাল জাফর শরীফ (২৪) নামে এক ভারতীয় মেডিকেল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ইকবাল জাফর শরীফ রাজশাহীর বেসরকারি বারিন্দ মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ