গণধর্ষণ শেষে ‘হত্যা’: নদীতে ভাসিয়ে দেয়া ছাত্রী হাজির থানায়!

এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর ধর্ষকরা তাকে গলা টিপে ‘হত্যা’ করে। পরে লাশ ভাসিয়ে দেয় নদীতে। তবে ধর্ষিত সেই স্কুলছাত্রী জীবিত, উপস্থিত হয়েছেন থানায়। অথচ এ ঘটনায় জড়িত তিন আসামি আদালতে ঘটনার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায়।

জানা গেছে, গণধর্ষণ শেষে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। ওই ঘটনার ১৪ দিন ও নিখোঁজের ৪৯ দিন পর ফিরে আসে ওই স্কুলছাত্রী। আর ওই তিন আসামি রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ কারাগারে।

রবিবার (২৩ আগস্ট) বন্দর থানার নবীগঞ্জ এলাকার এক মোবাইল দোকান তার মা-বাবা উদ্ধার করে সদর থানায় হস্তান্তর করে তাকে। ওই স্কুলছাত্রী জানায়, সে নিজেই প্রেম করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে বন্দরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করছিল তারা।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ‘ওই মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।’ তবে গ্রেফতারকৃত তিনজনের স্বীকারোক্তির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

ওই ছাত্রীর মা জানান, কুশিয়ারা এলাকার ইকবাল নামের ছেলের সাথে গত দেড় মাস ছিল সে। বিয়ে করে তারা সেখানে অবস্থান করছিল বলেও জানান তিনি।

গত ৪ জুলাই থেকে শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী (১৩) নিখোঁজ হয়। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই সদর থানায় নিখোঁজ জিডি করেন মা। পরে ৬ আগস্ট অপহরণ মামলা করেন তার বাবা। মামলায় উল্লে­খ করেন, আসামি আব্দুল্লাহস্কুলে যাওয়া আসার পথে মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিত।

এতে বাধা দিলে তারা অপহরণের হুমকি দেয়। গত ৪ জুলাই আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে তার মেয়ে ওই ঠিকানায় যায়। পরে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগিরা। এরপর থেকে মেয়ের কোনো খোঁজ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পরে তার মায়ের কললিস্ট চেক করে পুলিশ রকিবের সন্ধান পায়। তার নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ ওই স্কুলছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করত। ঘটনার দিনও কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় রকিব, আব্দুল্লাহ ও মাঝি খলিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন এবং আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় আসামিরা জবানবন্দি দেন।

স্বীকারোক্তিতে তারা বলেন, ওই স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে তাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, স্কুলছাত্রী হত্যা মামলার আসামি আব্দুল্লাহ, রকিব ও খলিলুর রহমান স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

এছাড়া রকিব ও আব্দুল্লাাহকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে নতুন তথ্য দেয় আব্দুল্লাহ। ইস্পাহানী ঘাট থেকে স্কুলছাত্রীকে নিয়ে আব্দুল্লাহ ছোট বৈঠা চালিত নৌকা ভাড়া করে। রাত ১২টার মধ্যে স্কুলছাত্রীকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় শীতলক্ষ্যায়। এতে সাহায্য করেছিল মাঝি খলিল।

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে পুলিশ প্রশাসনও। প্রকৃত ঘটনা বের করার আহবান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


সর্বশেষ সংবাদ