ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবার সমাজচ্যুত, সোয়া লাখ টাকা জরিমানা!

  © ফাইল ফটো

ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তসত্ত্বা হয়ে পরায় অস্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর পরিবারকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা ‘জরিমানা’ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। গ্রাম্য শালিসের নামে এই ‘জরিমানা’ ধার‌য করা হয়। টাকা না দিতে পারায় পরিবারটির গরু, ছাগলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু তাই নয় গ্রাম্য শালিসে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারকে ৬ মাসের জন্য সমাজচ্যুত করা হয়।

এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নে। আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মেয়েটির পরিবার ১৬ জনকে আসামি করে মহম্মদপুর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছে। এর আগে গত ১৬ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগে একই থানায় মামলা করে ভুক্তভোগীর পরিবার।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহাবুল ইসলামের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোরীর প্রেম চলছিল। সেই সুযোগে তাকে ধর্ষণ করে শাহাবুল। সম্প্রতি ওই কিশোরীর শারীরিক পরিবর্তন হওয়ায় তার পরিবার বুঝতে পারে সে গর্ভবতী।

এমন পরিস্থিতিতে গত ৮ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নহাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা সিদ্দিকি ওরফে লিটনের কাছে যান ওই কিশোরীর চাচা। দুই দিন পর ১০ জুলাই ভুক্তভোগী পরিবারের বাড়ির পাশে একটি জায়গায় সালিস বসানো হয়। মোস্তফা সিদ্দিকির নেতৃত্বে ওই সালিসে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে বিয়ের আগে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা পরিশোধের জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ছয় মাসের জন্য পরিবারটিকে সমাজচ্যুত করেন সালিসকারীরা। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে না যাওয়ার জন্যও পরিবারটিকে হুমকি দেওয়া হয়।

ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর বাবা বলেন, প্রেমের সুযোগ নিয়ে ধর্ষণ করায় বেরইল পলিতা ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহাবুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে গত ১৬ জুলাই মহম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ মামলা করেছি আমরা। ওই ছেলের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমার মেয়ের। মামলার পর মোস্তফা সিদ্দিকী লিটন আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। অবিলম্বে জরিমানার টাকা দিতে চাপ দেয়। আমরা তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সোমবার বাড়িতে ওবায়দুরের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে আমার গরু, ছাগল, ভ্যান ও বাইসাইকেলসহ বেশ কিছু জিনিস ছিনিয়ে নেয়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় ফেরত পাই।

এ ঘটনায় পরিবারটি একটি মামলা করেছে জানিয়ে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারক বিশ্বাস বলেন, ওই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা সিদ্দিকি, ওবায়দুর রহমানসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সিদ্দিকি ও তাঁর সহযোগী ওবায়দুর রহমান। মোস্তফা সিদ্দিকি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সালিসে আমি উপস্থিত ছিলাম না। আর চাঁদা দাবির প্রশ্নই ওঠে না। আমি উল্টো তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।’


সর্বশেষ সংবাদ