করোনা আক্রান্ত: সুস্থ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রশ্ন

গত বছরের শেষ দিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে দেখা যায়—কেউ কেউ দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠলেও কারো ক্ষেত্রে আবার একটু বেশি সময় লাগছে। আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে প্রাথমিক পর্যায়ে একজন কতটা আক্রান্ত হচ্ছে তার ওপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চীনে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ হতে মোটামুটি দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়। বয়স, জেন্ডার এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে কোভিড-১৯ কারো কারো ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হতে কতটা সময় লাগতে পারে তা নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর মধ্যে চারটি প্রশ্নের হলো- 


কারো যদি কেবল মৃদু লক্ষণ প্রকাশ পায়?

যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই প্রধান যে লক্ষ্মণ প্রকাশ পায় তা হলো জ্বর ও কাশি। এছাড়া তারা গায়ে ব্যথা, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। প্রথম দিকে এই কাশি সাধারণত শুকনো থাকে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে শ্লেষ যুক্ত কাশিও হতে পারে, যেখানে করোনা ভাইরাসের হাতে মারা যাওয়া ফুসফুসের মৃত কোষ থাকতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সাধারণত পুরোপুরি বিশ্রাম, প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার এবং প্যারাসিটামলের মতো ব্যথানাশক দেওয়া হয় রোগীকে। মৃদু লক্ষ্মণ থাকা এসব রোগী সাধারণত দ্রুত এবং ভালোভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে এক সপ্তাহের মধ্যেই জ্বর কমতে হয়।

কারো যদি গুরুতর লক্ষ্মণ প্রকাশ পায়?

কারো কারো ক্ষেত্রে মৃদু লক্ষণ উপসর্গ প্রকাশ পেলেও কারো ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস অনেক বেশি গুরুতর হতে পারে। সাত থেকে দশ দিনের মাথায় অনেকের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। এমনটি এটি হঠাত্ করেও ঘটতে পারে। গুরুতর অবস্থায় সাধারণত রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে এবং ফুসফুসে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এর কারণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে তখন শরীরের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে কৃত্রিম ব্যবস্থাপনায় অক্সিজেন জোগান দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এই ধরনের রোগীদের সুস্থ হতে এমনকি দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে; শরীর ক্লান্ত থাকে।

কখন আইসিইউর প্রয়োজন হয়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গড়ে ২০ জন রোগীর মধ্যে এক জনের আইসিইউ সুবিধার প্রয়োজন হয়। যেখানে ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা থাকা জরুরি। সাধারণত এই ধরনের রোগীদের সুস্থ হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। যে কোনো রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের আইসিইউতে থাকতে হয় তারা আইসিইউ থেকে বের হলেও সরাসরি বাড়ি যেতে পারে না। পর্যবেক্ষণের জন্য বেশ কিছুদিন নিয়মিত পরীক্ষার জন্য তাদের হাসপাতালেই থাকতে হয়। ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের ডিন ড. আলিসন পিটার্ড বলেন, কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এক বছরও লাগতে পারে। হাসপাতালের বিছানায় থাকতে থাকতে অনেকের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, হাঁটার সময় হতে পারে। এসব রোগীর পেশি নতুন করে ঠিক হতে বেশ সময় লাগে। পরবর্তী জীবনে কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে করোনা ভাইরাস? যেহেতু মাত্র কয়েক মাস আগেই বিশ্বে কোভিড-১৯ এর আবির্ভাব তাই এর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি চিকিত্সকরা। তবে ফুসফুসের ওপরই মূলত করোনা ভাইরাসের আক্রমণ হয় বলে ভবিষ্যত জীবনেও তা প্রভাব ফেলতে পারে। শারীরিক প্রভাবের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর করোনা ভাইরাস প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা চিকিত্সকদের।

দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে কি?

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এখনো পরিপূর্ণ তথ্য মানুষের কাছে না থাকায় এই নিয়ে জল্পনার কোনো শেষ নেই। কোথাও কোথাও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে তা হলো—একজন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যতো বেশি হবে তা সেরে ওঠার সম্ভাবনাও ততো বেশি। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একজনের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই মুখ্য ভূমিকা রাখে। তবে কারো কারো দ্বিতীয়বার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটি দেখে চিকিত্সকরা মনে করছেন—হয়তো পরীক্ষায় কোন ঘাটতি থেকে যেতে পারে। সেই পরীক্ষার ঘাটতির কারণেই হয়তো প্রথম দফায় হয়তো তাকে তাকে ভাইরাসমুক্ত বলে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা জোর দিচ্ছেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর। তাদের মতে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হলে দ্বিতীয়বার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)


সর্বশেষ সংবাদ