বশেমুরবিপ্রবিতে হামলার নেতৃত্বে কে এই কালো আরিফ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে পাঁচ দিন ধরে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২১ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলে ঘটে হামলার ঘটনা। আর এর পরেই আলোচনায় চলে আসে হামলায় নের্তৃত্ব দেয়া ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ ওরফে কালো আরিফ।

সুমন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ২১ তারিখ ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোবহান সড়কে আরিফ ও তার কয়েকজন সহযোগী তাকে এবং তার বন্ধুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাঁধা দেয় এবং মারধর করে ফোন কেড়ে নেয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ,  আরিফ উপাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং অর্থের বিনিময়ে উপাচার্য তাকে প্রয়োজন অনু্যায়ী ব্যবহার করেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে উপাচার্যের নিকট থেকে আরিফের টাকা গ্রহণের প্রমাণসহ বেশ কিছু ছবি এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে দেয়া আরিফের বেশ কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ তহবিলের একটি হিসাব থেকে দেখা যায় আরিফ ১৪ মার্চ ২০১৯ তারিখে ফেস্টুলা চিকিৎসা বাবদ ১,৯০,০০০ টাকা এবং ২০ মে ২০১৯ তারিখে চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ১৪,৩০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এ সময়ে চিকিৎসা করানোর কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া তিনি ২৭ মে ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য ২৫,০০০ টাকা নিয়েছেন যে টাকার খরচ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য নিজেই আরিপকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মিথ্যা অজুহাতে এসকল টাকা দিয়েছেন। এদিকে আরিফের ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখা যায়, যেখানে অনুষ্ঠান কিংবা সফরে উপাচার্যের সফরসঙ্গী হন তিনি। এছাড়া সাম্প্রতিক ঘটনায় আরিফের কথোপকথনের বেশ কিছু স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে যার একটিতে দেখা যায় আরিফ ২০ তারিখ রাত ২ টায় একজনকে বলছেন "কালকে সকল একাডেমিক কাজ বন্ধ। কালকের আন্দোলনে প্রচুর ঝামেলা হবে" পরবর্তী দিন আরিফের কথার বাস্তবায়ন ঘটে।

 সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা আসে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা হয়। শুধু সাধারণ শিক্ষার্থী নয় উপাচার্যের বিরুদ্ধে সংবাদ লেখায় বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছেন সাংবাদিকদেরকেও।

 এসবের বাইরেও আরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অবৈধ সম্পর্ক এবং মাদক সেবনের। শুভ হাসান নামে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, আরিফ তার পাশের মেসে থাকতো। সেখানে সে রান্না করার দায়িত্বে থাকা এক মহিলাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, আরিফ আরো একাধিকবার একাধিক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকালে ধরা পড়েছে।

এছাড়াও আরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে গাঁজা সম্রাট নামেও পরিচিত বলে জানান শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, "এমন কোনো অপকর্ম নেই যার সাথে আরিফ জড়িত নয়। কিন্তু উপাচার্যের সাথে সখ্যতা থাকায় কেউ কিছু বলতে পারেনা।"

এদিকে এতসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ছাত্র সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে আরিফুল ইসলাম সাকিবকে। রাশেদুজ্জামান পরাগ সাক্ষরিত একটা বিবৃতিতে জানানো হয় আরিফের কর্মকান্ডে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ছাত্র সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েচে। আরিফ সংগঠনটিতে সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়া সংগঠনটি তাদের প্রধান উপদেষ্টা উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন কেও অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে।

এতসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরিফের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ