শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিবারের বিরুদ্ধে জহির রায়হানের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

  © সংগৃহীত

শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার ও ছেলে অমিতাভ কায়সারের বিরুদ্ধে তার ছোট ভাই জহির রায়হানের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার।

জহির রায়হানের নাতনী ভাষা রায়হান ফেইসবুকে অভিযোগ লিখেছেন, গুলশানের বারিধারার এক বিঘা জমি এবং গুলশান আড়ংয়ের পেছনের তিন বিঘা জমি তার দাদার টাকায় কেনা হলেও সেই সম্পত্তিগুলো পান্না কায়সার, শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সার দখল করে রেখেছেন।“আমার দাদার (জহির রায়হান) ভাইয়েরা এবং বোনেরা তাদের অনেকবার বলেছেন আমাদের সম্পত্তি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু তারা সব সময় এড়িয়ে গেছে।”

জহির রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাষা। ফেইসবুকে আরেক স্ট্যাটাসে একই অভিযোগ তুলেছেন ভাষার বাবা বিপুল রায়হানও। জহির রায়হানের ছেলে বিপুল রায়হান এখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন; তিনি সুস্থ হলেই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা ভাষা।

এতদিন পর অভিযোগের কারণ জানতে চাইলে ভাষা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি আমরা পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা এড়িয়ে গেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা অভিযোগ তুলেছি।”বিপুল রায়হান জহির রায়হানের প্রথম স্ত্রী সুমিতা দেবীর ছেলে।

জহির রায়হানের দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দার তরফ থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুচন্দা বলেন, জহির রায়হানের টাকায় গুলশানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসার পাশের এক বিঘা এবং গুলশানের আড়ংয়ের পেছনের জমি কেনা হয়।“আমি নিজের চোখে দেখেছি, জহির রায়হানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গুলশানের অ্যাম্বাসেডরের বাড়ির পাশের জমিটা শহীদুল্লাহ কায়সারের নামে কেনা হয়েছে। আর আড়ংয়ের পেছনের জমিটা নিলামে কেনা হয়েছিল সাংবাদিক আব্দুল বাতেনের নামে। জমিটা পরে জহির রায়হানের নামে ট্রান্সফার করার কথা থাকলেও তিনি মারা যাওয়ার পর শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিবারের সদস্যরা জমিটা বিক্রি করে দেন।”

শহীদুল্লাহ কায়সার ও জহির রায়হানের চাচাত ভাই ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের লেখা এক কলামে বড়ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের নামে গুলশানে জহির রায়হানের টাকায় জমি কেনার তথ্য উঠে আসে।

২০১৬ সালের ২৬ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘একাত্তরের গণহত্যা ও জহির রায়হান’ শিরোনামে কলামে তিনি লেখেন, “বড়দা (শহীদুল্লা কায়সার) দৈনিক সংবাদ-এর নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বেতনের অর্ধেক যেত পার্টি তহবিলে (কমিউনিস্ট পার্টি)। বিয়ের পর বড়দার ভবিষ্যৎ ভেবে গুলশানে তাঁর নামে জমি কিনেছিলেন। কায়েতটুলীর পৈতৃক বাড়িতে বড়দা থাকবেন বলে একতলাকে দোতলা করেছিলেন।”

 

মাওলানা মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ ও সৈয়দা সুফিয়া খাতুনের আট সন্তানের মধ্যে সবার বড় শহীদুল্লাহ কায়সার, দ্বিতীয় সন্তান নাফিসা কবীর এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, তৃতীয় সন্তান জহির রায়হান, চতুর্থ সন্তান জাকারিয়া হাবিব মারা গেছেন, পঞ্চম সন্তান সুরাইয়া পেশায় চিকিৎসক, ষষ্ঠ সন্তান শাহেনশাহ বেগম দীর্ঘ দিন নিউইয়র্কে শিক্ষকতা করে এখন মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় বাস করছেন, সপ্তম ও অষ্টম সন্তান মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ ও সাইফুল্লাহ।

আট ভাই-বোনের একান্নবর্তী পরিবারের দায়িত্বে ছিলেন জহির রায়হান; তার টাকায় সংসার চলেছিল বলে জানান বোন শাহেনশাহ বেগম। তিনি বলেন, “জহির রায়হানের হাতে অবস্থাও শুরুতে ভালো ছিল না। পরে সঙ্গম ও বাহানা চলচ্চিত্র থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে নিজের টাকায় ঢাকায় বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন। আট ভাই-বোনকে বাদ দিয়ে জমিগুলো একাই পান্না ভাবি (শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী) নিলেন।“ব্যাপারটা নোংরা। আমরা অনেক বোঝানোর পরও উনি কেন বুঝলেন না, সেটা বলতে পারছি না। পান্না ভাবি ইচ্ছা করলে বিষয়টির সমাধান করতে পারতেন। শান্তি পাওয়ার জন্য এত অর্থ দরকার পড়ে না। বিষয়গুলো নিয়ে ছলচাতুরি না করলেও পারতেন। জহির রায়হান থাকলে এই রকম কোনোভাবেই হত না।”জহির রায়হানের ছেলেরা ‘সুষ্ঠু বিচার পাক,’মন্তব্য করেন তাদের ফুপু শাহেনশাহ।

জহির রায়হানের নামে কেনা জমিগুলো মুক্তিযুদ্ধের পর শহীদুল্লা কায়সারে দুই সন্তান শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সারের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বলে জানান তাদের ছোটভাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, “জহির রায়হানের টাকায় কেনা জমিগুলো চার ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করানোর জন্য আমি দৌড়াদৌড়ি করেছি। শমীর মায়ের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আব্দুল বাতেন জমিগুলো শমী-অমির নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার তার চাচা জহির রায়হানের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি  তিনি বলেন, “এটা একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ।”এনিয়ে আর কথা বলতে অনীহা দেখিয়ে শমী বলেন, “এটা বাবা-চাচাদের বিষয়। উনারা বলছেন, বলুক। আমাকে এটি নিয়ে প্রশ্ন করবেন না। এটা নিয়ে আমরা কথা বলতে চাচ্ছি না।”


সর্বশেষ সংবাদ