নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি বিভুরঞ্জনের

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় দোঘীদের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি লিখেছেন আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতি এবং আওয়ার টাইম’র গ্রুপ জয়েন এডিটর বিভুরঞ্জন সরকার। এতে আওয়ামী লীগেও শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, দলে অনেক আবর্জনা ঢুকে গেছে।

বৃহস্পতিবার ফেসবুকে এ খোলা চিঠি লেখেন বিভুরঞ্জন সরকার। সেটি হুবহু দেওয়া হল-

‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা,
আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে দু’চারটি কথা নিবেদন করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সবই জানেন এবং বোঝেন। কারণ আপনি শাসক নন, আপনি দেশহিতৈষী, মানবকল্যাণব্রতী। আপনি দরদি, আপনি হৃদয়বান। আমি জানি ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের করুণ মৃত্যুতে আপনার হৃদয়েও গভীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাই আপনার কাছে বিনীত আরজ, নুসরাতের ঘাতকদের আপনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।

আপনিই আজ বাংলাদেশ। আপনি আমাদের নতুন সময়ের রূপকার, পথপদর্শক। আপনি যা পারেন, যা পারবেন আর কেউ তা পারে না, পারবে না। তাই সব কিছুতেই আমাদের আপনার ওপর ভরসা, আপনার ওপর নির্ভরতা। আপনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্ভব করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ী অভিযুক্তদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আপনি দেখিয়েছেন আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব। 

নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়নে আপনার অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং প্রশংসিত। অথচ আপনার সময়েই একের পর এক ভয়াবহ সব নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এসব ঘটনা আপনার ভাবমূর্তিতে কালি লেপে দিচ্ছে। তাই নারী নির্যাতকদের বিরুদ্ধে আপনাকে কঠোর হতে হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগেও আপনাকে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। দলে অনেক আবর্জনা ঢুকে গেছে। জঞ্জাল সাফ না করলে আপনার সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। ভাঙ্গা বা অচল গাড়ির চেয়ে খালি গ্যারেজ ভালো। শক্ত হাতে দলে পরিচ্ছন্নতা অভিযান না চালালে আপনাকেই বারবার বিব্রত হতে হবে। 

নুসরাতের ঘাতকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এদের ধরুন। দল থেকে বহিষ্কার করুন। এদের প্রতি অনুকম্পা দেখালে ‘দুষ্টু’দের আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

মাননীয় নেত্রী, মানুষের সব আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল আপনি। আওয়ামী লীগ এবং আপনি অবশ্যই অবিভাজ্য। তবে এটাও ঠিক যে, আপনি এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে এগিয়ে। আপনার সঙ্গে তাল মেলানোর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে আওয়ামী লীগকে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উচ্চ নৈতিকতারও অধিকারী হতে হবে। নৈতিকতার চরম অবক্ষয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কালো পর্দায় ঢেকে দেবে।

সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। আমাদের হেরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের জিততেই হবে। আপনার নেতৃত্ব বাঙালিকে নতুন নতুন বিজয় উপহার দেবে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আপনার কঠোর মনোভাব গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।
শ্রদ্ধাসহ -- 
বিভুরঞ্জন সরকার।’

The Daily Campus এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন