নুসরাত হত্যার আসামী পৌর কাউন্সিলর মোকসুদ গ্রেফতার

  © সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোকসুদ আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।বিষয়টি সাংবাদিকদেরকে নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। নুসরাতের ভাই নোমানের করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন মোকসুদ। তিনি সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেও জানা গেছে।

নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি ও আরেক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ, মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আফসার উদ্দিন এবং নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন।

এছাড়া আসামিদের মধ্যে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামিম, হাফেজ আবদুল কাদের ও নুর উদ্দিন এখনও পলাতক রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জানাজার নামাজে অংশ নিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। তার জানাজায় স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার হাজারো মানুষ অংশ নেন। বৃহস্পতিবার মো. ছাবের সরকারি পাইলট হাইস্কুল মাঠে সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার নামাজের ইমামতি করেছেন নুসরাতে বাবা মাওলানা এ কেএম মুসা। নামাযে জানাযা শেষে পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাদির পাশে দাফন করা হয় নুসরাতকে।

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঁচ দিন লড়াই করে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায় নুসরাত। গত শনিবার সকালে ফেনীর পৌর শহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, সকালে পরীক্ষা দিতে গেলে কেন্দ্রে প্রবেশের আগে নুসরাতকে কয়েকজন ‘মুখোশ পরা’ মেয়ে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারা নুসরাতকে জানায় যে, তার এক বান্ধবীকে ছাদে পেটানো হচ্ছে। নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, নুসরাত কয়েকদিন আগে তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেছিল। সেই ঘটনার জেরে ওই অধ্যক্ষের পক্ষের শিক্ষার্থীরা তার বোনকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে।

চিকিৎসকের সামনে পুলিশের জবানবন্দিতে নুসরাতও জানিয়েছেন যে, পরীক্ষার কেন্দ্রের বাইরে তাকে কয়েকটি মুখোশ পরা মেয়ে ডেকে নিয়ে যায় এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলাটি তুলে নিতে বলে। নুসরাত তাতে অস্বীকৃতি জানানোয় তারা তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পরিবারের অভিযোগ, ওই মেয়েরাই নুসরাতকে মিথ্যা বলে, পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা তার বোনকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে এমন অভিযোগে পুলিশের কাছে মামলা করে নুসরাতের পরিবার।


সর্বশেষ সংবাদ