চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তছনছ প্রতিবন্ধী কক্ষ: কাঁদলেন শুক্কুর
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০১৯, ১২:৫১ PM , আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯, ০১:০৯ PM
আগের দিনের সংঘর্ষের জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সোহরাওয়ার্দী হলে হামলা চালিয়েছিলো চবি ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপ। এসময় ২০-২৫ টি রুমে ভাংচুর চালায় তারা। এর থেকে রক্ষা পায়নি প্রতিবন্ধী শুক্কুর আলমের কক্ষটিও।
এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীরা। সেখানেই হামলার নির্মম বর্ণনা দিয়ে কেঁদেছেন প্রতিবন্ধী শুক্কুর আলম। কাঁদিয়েছিলেন বাকীদেরকেও।
জানা যায়, প্রতিবন্ধী শুক্কুর আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের ২১৭ নং রুমে থাকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হঠাৎ ভাংচুরের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। চোখ মেলতেই দেখেন গায়ের উপর পড়ে আছে কাচের ভাঙ্গা টুকরো। বাইরে থেকে গালাগালের শব্দ শোনা যাচ্ছে। শুক্কুর রুম থেকে বের হয়ে করজোড়ে বলতে থাকেন ‘ভাই আমি প্রতিবন্ধী। এটা প্রতিবন্ধীদের রুম। দয়া করে এটা ভাংবেন না।’
এরপরও ভাংচুরকারীরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। পুরো রুম ভাংচুর করেন। শুক্কুর বলেন, ‘খুব কষ্ট নিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম তখন।’ এভাবেই বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে রুম ভাংচুরের বিবরণ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার চবি ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সোহরাওয়ার্দী হলে প্রতিবন্ধীদের চারটি কক্ষ ভাংচুর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে এর প্রতিবাদে চবির প্রতিবন্ধী ছাত্র সমাজ বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি সোহরাওয়ার্দী মোড় থেকে শুরু হয়ে জিরো পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিসএ্যাবল স্টুডেন্টস সোসাইটির (ডিসকু) সভাপতি আলহাজ উদ্দিন বলেন, ‘আজ খুব কষ্ট নিয়ে বলতে হচ্ছে আমার প্রতিবন্ধী ভাইদের উপর হামলা করা হয়েছে। বার বার প্রতিবন্ধী পরিচয় দেওয়ার পরেও তাদের রুম ভাংচুর করা হয়েছে। প্রশাসন রুম ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘পুরো রুম জুড়ে ভাঙ্গা কাচ। আমরা সেটা পরিস্কারও করতে পারছি না। রাতে ঘুমাতে পারছিনা। আমাদের ঘুমানোর জায়গা নেই। কোথাও কোনো ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না। আমরা এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই। যারা ভাংচুর চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে আগামী রবিবার মানববন্ধন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
ডিসকুর সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘যাদের হাতে প্রতিবন্ধীরা নিরাপদ নয়, তারা রাজনীতি করার যোগ্যতা রাখেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে তাদের হাতে প্রতিবন্ধীরাও নিরাপদ থাকবে না এটা হতে পারে না। দয়া করে আমাদের নিরাপদ করুন। আমাদের আলাদা ব্লগ দিন। আমরা এমনিতেই প্রতিবন্ধী। তার উপর আমাদেরকে আরো প্রতিবন্ধী করা হচ্ছে। আমাদের দায়ভার কে নিবে?’
ডিসকুর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুবছর ধরে আমরা খুব নির্যাতিত। হঠাৎ করেই আমাদের রুমে এসে ভাংচুর চালানো হয়েছে। আমরা প্রতিবন্ধী বলার পরেও কেউই আমাদের রেহাই দেয়না।’ ক্যাম্পাসে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।