কুর্মিটোলা ক্যাম্পে হাত বাড়ালেই মেলে মাদক, চিন্তিত অভিভাবকরা

  © সংগৃহীত

রাজধানীর পল্লবী থানার পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্প। এখানে সারি সারি টিনের ঘরে বসবাস স্বল্প আয়ের মানুষের। প্রধান সড়কসংলগ্ন এই ক্যাম্পের বিভিন্ন গলিতে অবাধে চলে মাদক কেনাবেচা। এখানে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ইয়াবা। হরহামেশা চলে মাদকের কারবার। এই মাদকের মূল হোতা কারবারি শাহাজাদি বেগম। গলিতেই তার বাড়ি। এখানে বসবাসরত অনেক নারী-পুরুষ তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

শুধু ক্যাম্পের এ গলিতে নয়, পল্লবী থানা এলাকায় আরও একাধিক স্থানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা সহজেই মেলে এখানে। এতে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। অনেক অভিভাবক সন্তান নিয়ে খুবই চিন্তিত। এ ছাড়া মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে চুরি-ছিনতাই করছে মাদকাসক্তরা। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে দৈনিক সমকাল।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, সকালে ঘর থেকে বের হলেই চোখে পড়ে মাদক কেনাবেচা। সন্ধ্যায় কিংবা রাতে ঘরে ফেরার সময়েও একই চিত্র। মাঝেমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে চলে যায়। আবার আগের মতো চলতে থাকে মাদকের বিস্তার।

ডিএনসি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ডিএনসির ঢাকা উত্তর মহানগর কার্যালয় পল্লবী থানা এলাকায় অন্তত ১০ বার অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ১১ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১ গ্রাম হেরোইন, ৪১০ ইয়াবা, ফেনসিডিল ২ বোতল ও ২৭৫ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়। অন্যদিকে দুই মাসে পল্লবী থানা পুলিশ মাদক মামলা করেছে ৪৫টি। গ্রেপ্তার করেছে ৭৯ জনকে। তাদের কাছ থেকে ৮৯ গ্রাম হেরোইন, ৮ কেজি ৯৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ হাজার ৭০০ ইয়াবা, ৬৭ বোতল ফেনসিডিল ও তিন লিটার চোলাই মদ জব্দ করা হয়।

পুলিশ বলছে, অর্ধশতাধিক স্থানীয় মাদক কারবারির তালিকা করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। তালিকার প্রত্যেকেই একাধিক মাদক মামলার আসামি। পল্লবী এলাকার অন্যতম মাদক কারবারি ফাতেমা খাতুন ওরফে ফতেহ। ফতু নামেই সে বেশি পরিচিত। পল্লবীর বাউনিয়াবাদ বি ব্লকের ৬ ও ৭ নম্বর লাইনে তার মাদক কারবার। এটি মাদকের গলি হিসেবেই পরিচিত। ফতুর পরিবারের প্রায় সবাই মাদক কেনাবেচায় জড়িত। তারা বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে কেনাবেচা করে। নিজের বাড়ির সামনে আরেকটি বাড়ি বন্ধক নিয়েছে শুধু মাদকের কারবার করার জন্য।

কুর্মিটোলা ক্যাম্পের গলির অন্তত তিন বাসিন্দা জানান, ফতু ২৪ ঘণ্টা মাদক কেনাবেচা করে। তাকে এ কারবার বন্ধ করতে বলার মতো দুঃসাহস নেই ক্যাম্পবাসীর। কারণ, ফতু সাঙ্গোপাঙ্গ পোষে। হুকুম দিলেই তারা যে কারও ওপর হামলা করে। বলা চলে, ভয়ে সবাই মাদক কারবার মেনে নিয়েছে।

কালশী মোড়ের অদূরে ২২ তলা নামক এলাকায় ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে কোহিনুর ও শাহিনুর। তারা পাইকার কারবারি মো. জসিমের কাছ থেকে এসব সংগ্রহ করে। কালশীর কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের ই ব্লকের ৫ নম্বর গলিতে ইয়াবা বিক্রি করে টুনটুন, রানা, রাজন, কলিম, মোহাম্মদ আলী ও আরিফ।

পল্লবী থানা পুলিশের কাছে যে অর্ধশতাধিক মাদক কারবারির তালিকা রয়েছে, সেই তালিকার শুরুতেই রয়েছে পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্পের শাহাজাদি বেগম, সেকশন ১০-এর এ ব্লকের ১৮ নম্বর গলির মফিজ, সেকশন-১১-এর বি ব্লকের লিটন, ১২ নম্বর সেকশনের কুর্মিটোলা ক্যাম্পের ই ব্লকে শাহানাজ, মোহাম্মদ আলামিন, লাইলী, মর্জিনা, ফজর আলী মাতব্বর, রাজ্জাক ও রনি, ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকে মো. রিপন, জামিলা বেগম, সাইমা বেগম, মুন্না, দুলারা, ডলার, মো. আনোয়ার, নওশাদ, মিল্লাত ক্যাম্পে জুম্মন, কাহানা, রহমত, বিজলী, সাব্বো, সনি, বাউনিয়াবাঁধে ফতু, হুমায়ন, রহমান, আমির, মুসা, হারুন ও স্বপন এবং ইরানি ক্যাম্পের দেলোয়ার। তাদের প্রত্যেকর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, বস্তি এলাকায় মাদকের উৎপাত বেশি। তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। প্রতিদিনই মাদক কারবারি ও মাদকাসক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, গোপনে অনেকে মাদক কারবারে সক্রিয় থাকলেও প্রকাশ্যে বিক্রির তথ্য নেই।


সর্বশেষ সংবাদ