ঈদের ফুর্তির জন্য বন্ধুর গলা কেটে ছিনতাই, মৃত ভেবে ফেলে যাওয়া সেই লাশ...

  © সংগৃহীত

ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক তরুণের গলা কেটে জখমের পর তাঁর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় কিশোর গ্যাং ‘হ্যাঁচকা গ্রুপ’-এর চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গলা কেটে জখমের পর ওই তরুণকে মৃত ভেবে ফেলে যান ছিনতাইকারীরা। তবে ওই তরুণ বেঁচে যান। বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি চিকিৎসাধীন।

ভুক্তভোগী অটোরিকশাচালকের নাম শাওন দাস (২০)। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মুহুরিপট্টি এলাকার রাম চন্দ্র দাসের ছেলে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কিশোর গ্যাং হ্যাঁচকা গ্রুপের প্রধান শাকিল আহমেদ ওরফে হ্যাঁচকা শাকিল (২০), সজীব মিয়া (২১), আলমগীর হোসেন (২০) ও আনন্দ (২০)। পুলিশের ভাষ্য, ভুক্তভোগী ও ছিনতাইকারী—সবাই পূর্বপরিচিত ও বন্ধু। ঈদে ফুর্তি করার জন্য অটোরিকশাচালক বন্ধুকে ডেকে নির্জন স্থানে নিয়ে হত্যাচেষ্টা চালান অন্যরা।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত বুধবার রাত ১১টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের স্বপ্নধারা মডেল টাউন এলাকায় শাওন নামের এক অটোরিকশাচালক গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় শাওনের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।

পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মামলার পর পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। এরপর কিশোর গ্যাং হ্যাঁচকা গ্রুপের শাকিল, সজীব, আলমগীর ও আনন্দকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আনন্দ গলা কাটার কাজে ব্যবহৃত চাকু সরবরাহ করেছিলেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাকু ও অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার দাবি করেন, শাকিল, সজীব ও আলমগীর ঈদে ফুর্তি করার টাকা জোগাড় করতে বন্ধু শাওনের অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। বন্ধু শাওনকে কৌশলে অটোরিকশাসহ ঘুরতে যাবে বলে ডেকে নিয়ে আসেন আলমগীর। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের স্বপ্নধারা মডেল টাউনের ভেতরে নির্জন জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর সজীব পেছন থেকে শাওনের মুখ চেপে ধরেন। এরপর মাটিতে শুইয়ে তাঁর পা চেপে ধরেন আলমগীর। এরপর শাকিল চাকু দিয়ে শাওনকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেন।

পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, আলমগীর ও সজীব চাকু দিয়ে শাওনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। কিছুক্ষণ পর শাওন নিস্তেজ হয়ে গেলে তাঁরা মৃত ভেবে তাঁকে ফেলে পালিয়ে যান এবং অটোরিকশাটি ঘটনাস্থলের পাশের একটি জঙ্গলে লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে শাওন বেঁচে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।

সংবাদ সম্মেলন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দীন কবীর, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) অলক কুমার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ