মারধরের অভিযোগ দেওয়ায় যবিপ্রবি ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন, ‘গুলির’ হুমকি
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযোগ দেওয়ায় তাকে রাতভর বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফের অভিযোগ দিলে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার কক্ষে (৩০৬ নম্বর) এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী ছাত্র শাহরীন রহমান প্রলয় (২৪) বর্তমানে যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্ট ড. মো. তানভীর ইসলামকে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়ে বিচার চেয়েছেন। পরবর্তীতে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যশোর সদর হাসপাতালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেখতে যান। এ সময় তার চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী জানান, সোমবার কথা-কাটাকাটির জেরে আমাকে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ায় ঘটনায় বিচার চাওয়ায় ঘুম থেকে তুলে রাত ২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের নির্দেশে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় বন্ধু আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম। ৩০৬ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় ১০-১৫ জন আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারলে রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে পাড়াতে থাকে।
এ সময় তারা আমাকে বলতে থাকেন, কেন প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? এ সময় তারা আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে তারা রড দিয়ে আমার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করে। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন। এ সময় আমার মনে হচ্ছিল আমিও মনে হয় আবরার ফাহাদের মতো মরে যাবো।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য, প্রাণে বাঁচতে আমি ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানায়। এ সময় ভাই বলে, ‘কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারব।’ এ সময় ভাই আমার বুকে লাথি মেরে আমাকে মেঝেতে ফেল দেয়। বলে, ‘ভোর হওয়ার সাথে সাথে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবি। ক্যাম্পাসে যেন তোকে আর না দেখি।’
জানা গেছে, বিষয়টি যেন কাউকে না জানাতে পারে, সেজন্য তার বন্ধু আমিনুল ইসলাম শাহরীনের ফোন রেখে দেয়। একপর্যায়ে ঘটনা জানাজানির ভয়ে সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে শহরে নিয়ে চলে যায় আমিনুল ও রাজীব।
পরে জানাজানি হলে চাপে পড়ে দুপুরের দিকে শাহরীনকে তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেয় তারা। তিনি বাড়ি পৌঁছালে তার মাকে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল দিয়ে বাড়ি বোম মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানান শাহরীন।
আরো পড়ুন: কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিনিয়র-জুনিয়র সংঘর্ষে আহত ৫
এ ঘটনায় যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হুসাইন বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে, কথা বলতে পারছিল না। সে জানিয়েছে, তাকে আবরার ফাহাদের মতো মারা হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩ মে) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরীন রহমানের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরীন।