ফেসবুকে ভাইরাল হতে নিজের ৫ লাখ টাকার বাইকে আগুন

রাসেল মিয়া ওরফে জুনিয়র টাইগার শ্রফ
রাসেল মিয়া ওরফে জুনিয়র টাইগার শ্রফ  © সংগৃহীত

রাজধানীর আফতাবনগর হাউজিং এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ অন্যায়ভাবে মামলা দিয়েছে এমন অভিযোগ এনে রাসেল মিয়া ওরফে ‘জুনিয়র টাইগার শ্রফ’ নামের এক ব্যক্তি বাইকে আগুন দেন। তবে তিনি ফেসবুকসহ সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হতেই বাইকে আগুন দেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবি বলেন, রাসেলের সঙ্গে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং তার এক বন্ধুকে ট্রাফিক আইন ভাঙার দায়ে মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ। তিনি সেই কেসের স্লিপ দেখিয়ে নিজের পাঁচ লাখ টাকা দামের বাইকে আগুন দিয়েছেন। এই ভিডিও থেকে আয় করেছেন মাত্র ২০০ ডলার। 

ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, বর্তমানে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বাইকারের ভিডিও দেখতে পাই। তাদের মধ্যে ছেলেমেয়ে উভয়ই মূলত ইউটিউবার। তারা একটা গ্রুপ নিয়ে নিয়মিত দ্রুত গতিতে বাইক চালায়। রাসেল নিজেকে জুনিয়র টাইগার পরিচয় দিতেন। তার একটি গ্রুপ আছে, সেই গ্রুপে মেয়েরাও আছে। এসব মেয়েদের নিয়ে তিনি দ্রুত গতিতে বাইক চালায়। সম্প্রতি রাসেল ২০০ ডলার আয় করতে পাঁচ লাখ টাকা দামের বাইকে আগুন দেন।

আমরা তাকে ও তার মোটরসাইকেল উদ্ধার করি। পরবর্তীতে দেখা যায়, তার মোটরসাইকেলে উচ্চ শব্দের একটি যন্ত্র লাগিয়েছে। এই সব যন্ত্র লাগানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার ভিডিওতে যে মামলার তথ্য দিয়েছেন আসলে এমন কোনো ঘটনা তার সঙ্গে ঘটেনি। বরং ফুয়াদ নামে তার এক বন্ধুর মামলার স্লিপ। সেই ফুয়াদও বিপজ্জনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং অবৈধ উচ্চ শব্দের যন্ত্র সংযোজনের দায়ে এই মামলা খেয়েছেন।

হারুন বলেন, মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর এলাকার প্রবাসী বাবা-মায়ের সন্তান রাসেল মিয়া। যিনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাসেল ওরফে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দেন। এই নামে ফেসবুক ও ইউটিউবে অন্যের বানানো নানা ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করতেন, যার অধিকাংশই অর্থহীন, অশালীন ও দেশের আইনবিরোধী। 

বখে যাওয়া রাসেল ২০২০ সালে এইচএসসি পাশ করার পরে আর কোনো পড়াশোনা করেননি। মাঝে কিছু সময় ইন্ডিয়াতে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দিতেন। তিনি মোটরসাইকেল স্পিডিং স্টান্ডিংসহ বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছাড়তেন। তিনি তার আয় বাড়াতে এই কাজ করেছেন। এতে তাঁর সামান্য আয় হতো। মিলিয়ন ভিউ হলে জুয়ার সাইট প্রমোট করত রাসেল।

রাসেলকে গ্রেফতারের পর জানা যায়, তারা বাবা-মা বিদেশে থাকেন। দেশে বসে একটি মোটরসাইকেল কিনে রাসেল প্রতিদিন রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড, মাওয়া আফতাব নগর এলাকায় বিকট শব্দের বাইক খেলা, হাই স্পিডিং, বাইক স্ট্যান্ড এবং রাত-বিরাতে দলবেঁধে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অশ্লীলপনা চালিয়ে আসছিলেন। এছাড়াও তিনি তরুণ-তরুণীদেরকে বিপজ্জনক, অশ্লীল ভিডিও ও ফানি ভিডিও বানিয়ে ভিউ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তার কিছু ভিডিওতে মিলিয়ন ভিউ হলে তিনি অনলাইন জুয়ার সাইট প্রমোট করেন। 

হিরোইজম দেখিয়ে ভাইরাল হতে বাইক পুড়িয়ে ফেলেন রাসেল

বাইকে আগুন দেওয়ার ঘটনার বিষয়ে হারুন বলেন, ঘটনার দিন বাড্ডা থানার আফতাব নগরে কয়েকদিন আগে রাসেল তার বন্ধু ফুয়াদসহ কয়েকজন মিলে মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও তৈরি করেন। ভিডিওতে বাইক পোড়ানোর কারণ হিসেবে একটি কেস স্লিপ দেখিয়ে রাসেলকে বলতে দেখা যায়, ‘ট্রাফিক পুলিশ অন্যায়ভাবে তার মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেয়। এই অন্যায়ের মামলার প্রতিবাদ করতেই তার প্রিয় ও ভালোবাসার বাইকটিকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।’

ডিবি পুলিশ বলছে, প্রকৃতপক্ষে সেইদিন তাকে কোনো মামলা দেয়নি ট্রাফিক পুলিশ। যে কেস স্লিপটি ভিডিওতে নিজের বলে দাবি করে, কিন্তু সেটি ছিল তার বন্ধু ফুয়াদের। প্রকৃতপক্ষে ভাইরাল হতে, মিথ্যা হিরোইজম দেখাতে গিয়ে রাসেল এ কাজটি করেছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence