হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলা

হামলায় আহত একজনের মাথা ফেটে গেছে
হামলায় আহত একজনের মাথা ফেটে গেছে  © সংগৃহীত

কুমিল্লা নগরীতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে সরকার সমর্থক যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এতে একজনের মাথা ফেটে যাওয়াসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঐক্য পরিষদের নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগও করেছেন।

তবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, মূলত সংঘাত এড়াতে পুলিশ মিছিলটিকে কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে যেতে দেইনি। কারণ কান্দিরপাড়ে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। আকস্মিক তারা মিছিল নিয়ে এসে ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করেন। পরে আমরা পরিস্থিতি সামাল দিই। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

এদিকে, হামলায় আহতদের দেখতে তাদের বাসায় গিয়েছেন জেলা প্রশাসন খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান। এ সময় ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এমন আশ্বাস দেন তারা।

পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার গত ৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দেন।

এ সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা চলাকালে মদ খেয়ে মণ্ডপে নাচানাচি না করে ‘মাদকমুক্ত পূজা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার বলেন, পূজা চলাকালে মদ খেয়ে নাচানাচি বন্ধ করতে হবে। আসুন, কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’।

তার এই বক্তব্য নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শুক্রবার সকালে কর্মসূচি ঘোষণা করে। বাহারের বক্তব্যের প্রতিবাদ ছাড়াও এর সঙ্গে চারণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিটি যুক্ত করা হয়।

এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল অডিটোরিয়ামে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য বাহার। ‘শান্তিপূর্ণ কুমিল্লাকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিছু স্বার্থন্বেষী মহল শারদীর দুর্গাপূজা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভ্রান্তি ছড়ানোর’ প্রতিবাদে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।    

ওই সভায় বাহার দাবি করেন, তার বক্তব্যকে ‘বিকৃতভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে আবারও তিনি মদমুক্ত পূজা’ করার আহ্বান জানান এবং ঘোষণা দেন, কুমিল্লায় মদ ও মাদকমুক্ত পূজা হবেই।

এ সময় তিনি শুক্রবারের জন্য দুটি কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, কান্দিরপাড়ে সকালে মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এবং বিকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ ও কৃষকলীগ শান্তি সমাবেশ করবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাপা ক্ষোভ, অস্থিরতা ও উত্তেজনার মধ্যেই সকালে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার রাজস্থলী মন্দিরের সামনে জড়ো হতে থাকেন ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কান্দিরপাড়ে জড়ো হন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।  

মন্দিরের সামনে ঐক্য পরিষদের একটি সমাবেশ হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি চন্দন রায়। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে দিকে যাচ্ছিলেন।

সে সময় পুলিশ নজরুল এভিনিউ সড়কের কর ভবনের সামনে মিছিলকারীদের বাধা দেয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী মিছিলকারীদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ করেন ঐক্য পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক তাপস বকশী।

তিনি বলেন, এ সময় যুব ঐক্য পরিষদের কর্মী আদিত্য দাসের মাথা ফেটে যায় এবং এক নারীসহ আরও তিনজন আহত হন।  

ধাওয়া ও হামলায় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর মিছিলকারীরা রানীর বাজার এবং মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে অবস্থান নেন।

ধাওয়া ও হামলার অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যর প্রতিবাদে আয়োজিত আমাদের শান্তি মিছিল দেখে যুব ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা আমাদের নেতা সংসদ সদস্য বাহার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশালীন স্লোগান দিতে থাকে এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আমাদের কিছু কর্মী তাদের ধাওয়া করে। তবে আমাদের নেতাকর্মীরা কারও ওপর হামলা করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence