রাবেয়া কবরে, মা আইসিইউতে, খুনি কারাগারে

বিলকিছ বেগম, শিক্ষক সাইদুল ইসলাম ও কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তার
বিলকিছ বেগম, শিক্ষক সাইদুল ইসলাম ও কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তার  © সংগৃহীত

গাজীপুরে গৃহশিক্ষকের ছুরিকাঘাতে নিহত কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারের দাফন গতকাল বুধবার বাদ জোহর তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনা থানার চরগাঁওয়ে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনার দিন ওই শিক্ষকের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন রাবেয়ার মা বিলকিছ বেগম।

হামলার পর রাবেয়ার মা বিলকিছ বেগমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাবেয়ার বাবা আবদুর রউফ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আজ সকালে বিলকিছ বেগমকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। এখন তিনি আশঙ্কামুক্ত।

বাসায় ঢুকে কুপিয়ে কলেজছাত্রী রাবেয়াকে হত্যার এ ঘটনায় তার মা বিলকিছ বেগম ছাড়াও ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন রাবেয়ার বোন হাবিবা (১৮), খাদিজা (১৫) ও জান্নাত (১৩)।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইদুল ইসলাম পালিয়ে যান। এই ঘটনায় সাইদুলের বিরুদ্ধে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেন রাবেয়ার বাবা আবদুর রউফ। পরে তাকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাবেয়া ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

আরও পড়ুন: বাসায় ঢুকে কলেজছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

অভিযুক্ত শিক্ষক সাইদুল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার মহেশতারা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি দক্ষিণ সালনা এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক, পাশাপাশি একটি মসজিদে নামাজ পড়াতেন।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউফ সালনা বাজারে একটি শোরুমে চাকরি করেন। সেখানেই সপরিবার বসবাস করেন। ছোট দুই মেয়েকে কোরআন শিক্ষার জন্য সাইদুল ইসলামকে হাউস টিউটর হিসেবে নিয়োগ করেন আবদুর রউফ। সাইদুল রাবেয়াকে বিয়ে করার জন্য তার পরিবারের কাছে প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।

বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সাইদুল রাবেয়াকে বিভিন্নভাবে বিয়ে করার জন্য চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সাইদুলকে বাসায় এসে পড়ানোর জন্য নিষেধ করে দেওয়া হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, সাইদুল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসায় প্রবেশ করে রাবেয়াকে ছুরি দিয়ে মাথা, গলা, হাত ও পায়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। তার চিৎকারে মা ও দুই বোন দৌড়ে রাবেয়া আক্তারের ঘরে গিয়ে দেখেন, সাইদুল ছুরি দিয়ে তখনো রাবেয়াকে ছুরিকাঘাত করছেন। এ সময় বাধা দিলে ছুরি দিয়ে তিনি অন্যদেরও আঘাত করে পালিয়ে যান সাইদুল।

রাবেয়ার বাবা আব্দুর রউফ বলেন, সাইদুল কুরআনে হাফেজ। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের আরবি পড়াতে সে আমার বাসায় আসত। আমার বড় মেয়ে বিজ্ঞানের ছাত্রী। সে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তার ইচ্ছা ছিল ডাক্তারি পড়বে।

তিনি বলেন, রাবেয়ার ইতালি, ইংল্যান্ড থেকে স্কলারশিপের জন্য অফার ছিল। মেয়ের মামা ইতালিতে থাকায় স্কলারশিপের জন্য কাগজপত্র তৈরি হয়েছিল। টাকা-পয়সাও জোগাড় করেছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে সে চলে যেত। কিন্তু এ সময়ই আমার মেয়ের দিকে চোখ পড়ে ওই হুজুরের।


সর্বশেষ সংবাদ