ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নির্যাতন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাগামহীনভাবে চলছে শিক্ষার্থী নির্যাতন। হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শণ, চাঁদাবাজি ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা। শিক্ষার্থী নির্যাতন এখন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট জনেরা। তাঁদের মতে, শিক্ষার্থী নির্যাতন নিয়ে সাধারণত আলোচনা কম হয়। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতাকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছে। সহিংসতা এবং ভয়ের সংস্কৃতি তো আছেই। এর সঙ্গে এই সংস্কৃতিকে স্বাভাবিকীকরণ শিক্ষার্থী নির্যাতন বাড়ার অন্যতম কারণ।
রোববার (৩০ এপ্রিল) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) আয়োজিত ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এই মন্তব্য করেন।
ওয়েবিনারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নির্যাতনের মূল কারণ হলো অপরাজনীতি। এই নষ্ট রাজনীতির কারণেই দেশে আইনের শাসন নেই। এ কারণেই লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। এটি বন্ধ করা না গেলে আমরা অন্ধকারেই থাকব, কোনো প্রতিকার হবে না।
ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মুশতাক হোসেন বলেন, বর্তমানে চরমপন্থিদের উত্থান ঘটেছে। তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরমপন্থা ছড়িয়ে দিতে চায়। শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বে এটি হচ্ছে। এর জন্য শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। তাহলে ক্যাম্পাসে সহিংসতা কমবে।
আরও পড়ুন: একাডেমিক পরীক্ষায় -৪, -৫ মার্ক দিলেন ঢাবি অধ্যাপক
বিএসএমএমইউ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী নির্যাতন এখন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ-আল মামুন, ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, এডুকেশন রিফর্মস ইনিশিয়েটিভের পরিচালক ড. আ ন ম এহসানুল হক, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব, স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চারের প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সিফাত, গ্লোবাল লেবার অর্গানাইজেশনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রধান ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুধু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের প্রায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৩০টিরও বেশি চাঁদাবাজি, ছাত্র নির্যাতন, আবাসিক হলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে যেখানে বিভিন্ন নেতা কর্মীর নাম উল্লেখ রয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতন, চমেকের চার ছাত্রকে শিবির সন্দেহে মারধর করে আইসিইউ-তে পাঠানো, বুয়েটের এক দম্পতির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিনতাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ২ ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হলের 'কৃষ্ণ রায়' নামক এক আবাসিক ছাত্রকে মারধরসহ শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে।