‘প্রতারক’ খোঁজার নামে ঘুরে ঘুরে ভিউ ব্যবসা করেন লুক ডামান্ত
সম্প্রতি ঢাকায় বেড়াতে আসা অস্ট্রেলিয়ান ভ্লগার লুক ডামান্তকে হেনস্তা করা বৃদ্ধ কালুকে নিয়ে ছবিসহ করা পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর ‘ট্যুরিস্ট পুলিশ, তাকে আটক করে অদিালতে প্রেরণ করে। আটক দোভাষী আব্দুল কালুকে ২০০ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে একদিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
পরে আব্দুল কালু জরিমানার ২০০ টাকা পরিশোধ করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্ত হয়েছেন। লুক ডামান্ত মূলত একজন ফুড ভ্লগার। কিন্তু তিনি অতিরিক্তি ভিউজের আশায় প্রতারক খোঁজার নামে বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে বিতর্কিত ভিডিও বানান। বাংলাদেশের কালুকে নিয়ে ভিডিও ভাইরালের পর উঠে আসে তার অতীতের বিতর্কিত ভিডিওর তথ্য।
ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি বিভিন্ন দেশের একজন কিংবা দুজন ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলতে বলেছেন, কিংবা ইঙ্গিত করেছেন ওই ব্যক্তি প্রতারক অথবা হয়রানিকারী। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ আরও একাধিক দেশের ঘুরে ঘুরে এভাবে প্রতারক খোঁজার ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল হয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিদেশি ভ্লগারকে বিরক্ত করা সেই ভিক্ষুক আটক
বাংলাদেশের কালুর ঘটনার পর তিনি নিজেই দেশের নেটিজেনদের কাছে প্রতারক চরিত্র উপস্থাপন হয়েছেন। মাহবুর আলম সোহাগ নামে একজন লিখেন, তার (কালু) হাতে হাতকড়া দেখে কষ্ট হচ্ছিল। মুক্ত হওয়ায় সেটা কমলো। ভালো কোনো আয়ের পথ না থাকায় তিনি হয়তো এমন কাছ করেছেন। তবে ওই বিদেশিও তাকে নিয়ে ইমোশনাল গেম খেলে ফেসবুকে ভিউ বাড়িয়েছেন।
মামুনুর রশীদ নামে একজন লিখেছেন, এরা মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করে। আর আমরা সাদা চামড়া দেখলেই ফেরেশতা ভেবে ফেলি। আর অন্যদিকে দেশি ভাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের নিয়ে করি গালাগালি।
আশিকুর রহমান নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, লুক ডামান্ত যেই দেশে যান সেই দেশেই এমন করেন আর ফেসবুকে এভোয়েড উমুক, তুমুক লিখে পোস্ট করেন। তিনি প্রতারক খোঁজার নামে ভিউ ব্যবসা করেন। উনি চায় উনার সাথে এমন সিনক্রিয়েট হোক আর তার কন্টেন্টটা ইউনিক কিছু হোক। যতভিউ তত ইনকাম।
বিভিন্ন দেশে লুক ডামান্তের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তানি দুই অশ্বারোহীসহ তিন ব্যক্তি, ভারতীয় অশ্বারোহী, খাবার বিক্রেতাসহ তিনজন, মিসরের একজন ভুট্টা বিক্রেতা, ইন্দোনেশিয়ার দুই ব্যক্তি, শ্রীলঙ্কার তিনজনকে নিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছেন। যাদের তিনি এড়িয়ে চলতে বলেছেন এবং এরা বিরক্তির উদ্রেককারী কিংবা প্রতারক হিসেবে তার ভিডিওতে তিনি দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: ২০০ টাকা জরিমানা নাকি ১ দিনের কারাবাস— যেটি বেছে নিলেন কালু
ঠিক একইভাবে কারওয়ান বাজারের আব্দুল্লাহ কালু দোভাষীর সেবা দিয়ে লুকের কাছে ৫০০ টাকা চেয়েছেন। এর আগে তিনি কোথায় কী খাবার পাওয়া যায় সেসব দেখিয়েছেন, ঘুরিয়েছেন। পরে টাকা চাইলে ডামান্ত একটা কেক কালুর হাতে দেন। কালু ফের ৫০০ টাকা চান, বলেন তার বাসায় খাবার কিনতে হবে। কিন্তু ডামান্ত টাকা দেননি, কয়েকটি ১০ টাকার নোট দেন। তবে টাকা নিয়েও ক্ষান্ত হননি কালু। সে লুকের পেছন পেছনে চলতে থাকেন এবং তাকে উত্ত্যক্ত করে চলছিলেন।
শেষ পর্যন্ত আর কোনো উপায় না পেয়ে লুক ডামান্ত মোবাইলে কল করার অভিনয় করে তার কাছ থেকে রেহাই পান। শেষে তিনি এই ভিডিওটি পরে নিজের ফেসবুক ও ইউটিবে পোস্ট করে বলেন, এই লোককে এড়িয়ে চলুন। পরে এ ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় নিন্দা জানাতে থাকেন অনেকে।
এর পরই পুলিশ কালুকে গ্রেপ্তার করে। কালু কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও প্যান প্যাসিফিক ও হাতিরঝিল মোড়ে হোটেল হলিডে ইনে বিদেশিদের টার্গেট করে টাকা চাইতেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। তবে কালুর দাবি তিনি ৪২ বছর ধরে দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন।
এদিকে গতকাল সোমবার (৩ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করলে তাকে ২০০ টাকা অর্থদণ্ডের বিনিময়ে মুক্তির আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত। গতকাল (রোববার) ডিএমপি অধ্যাদেশের ৭৭ ধারায় অপরাধ করায় তাকে একই অধ্যাদেশের ১০০ ধারায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
উল্লেখ্য, ব্লগার লিউক ডামান্টের ফেসবুকে প্রায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ফলোয়ার। ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করার পরই দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে দোভাষী আব্দুল কালুর হয়রানির এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন বার।