‘চোখে ঘুম ছিলো’ দুই ছাত্রীকে চাপা দেওয়া বাস চালকের
ভোলায় বাস চাপায় দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গাড়িটির চালকের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ড শেষে সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে পুনরায় তাকে আদালতে তোলা হয়। এরপর আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাংলাবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাকির হোসেন বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, (ঘটনার দিন রাতের বর্ণনা) ঘটনার আগের দিন রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের ফ্রিবোর্ট এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বাসটি চরফ্যাশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। সারারাত চালক গাড়ি ড্রাইভ করেছে। তাঁর চোখে ঘুম ঘুম ভাব ছিল। গাড়ির গতি ছিল অনিয়ন্ত্রিত।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, মামলা হওয়ার পর ঘাতক বাসটির চালকের বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এরপর দুইদিনের রিমান্ড শেষে সোমবার তাকে পুনরায় আদালতে তোলা হয়। রিমান্ডে সে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছে। দুর্ঘটনাটি কিভাবে ঘটছে এবং কি কারণে ঘটেছে তা রিমান্ডে সে স্বীকার করেছে। তবে মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে এখনই সবকিছু গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে গাড়িটির চালক মাদকাসক্ত ছিল না। তাকে ডোপ টেষ্ট (মাদকদ্রব্য সেবন করেছে কিনা সেই পরীক্ষা) করানো হয়েছে। তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল। তবে গাড়িটির ফিটনেস ও রোড পারমিট ছিল কিনা সেই বিষয়টি জানার জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রামে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের রিপোর্ট এখনও তদন্ত কর্মকর্তার হাতে এসে পৌঁছায়নি।
আরও পড়ুন: বাজারে দক্ষিণ সিটির অভিযানে ১০ মামলা, জরিমানা ৯৫ হাজার
এছাড়াও দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেই সড়কটি ছিল খানাখন্দভরা জানিয়ে মো. জাকির হোসেন বলেন, ওই সড়কে ধূলো উড়েছিল। ধূলোময়লায় স্পষ্টভাবে সামনের অটোরিকশাটিও দেখা যায়নি। দুইটা অটোরিকশা একসঙ্গে আসছিল। একটির পেছনে আরেকটি ছিল। হঠাৎ করে দুর্ঘটনা কবলিত অটোরিকশাটি সামনের অটোরিকশাটিকে ওভারটেক করতে যায়। আর তখনই ধূলাময়লা ও অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে বাসটি অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়।
এদিকে ঘটনার ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও বাসটির সুপারভাইজার ও সহকারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সুপারভাইজার ও সহকারী মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামি। পুলিশ বলছে, মামলার প্রধান আসামি ঘাতক বাসটির চালকের রিমান্ড শেষে যে তথ্য উপাত্তগুলো পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সুপারভাইজার ও সহকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
উল্লেখ, গত ১৭ মার্চ সকালে ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের মধ্য জয়নগর এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে চরফ্যাশের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা শ্যামলী সার্ভিস নামে একটি যাত্রীবাহী বাস অপর একটি অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই কলেজছাত্রীসহ তিনজন নিহত হয়। আহত হয় অটোরিকশা চালক। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই বাংলাবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এক এএসআই বাদী হয়ে গাড়িটির চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীকে আসামি করে সড়ক পরিবহন আইনে (২০১৮) একটি মামলা করেন। মামলায় গাড়িটির চালক আল-আমীনের বিরুদ্ধে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত তাঁর দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। সোমবার দুইদিনের রিমান্ড শেষে তাকে পুনরায় আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।