১০ বছরের মাদ্রাসাছাত্রকে ৩ মাস ধরে নির্যাতন, ৩ শিক্ষক পলাতক
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ১০ বছরের এক মাদ্রাসাছাত্রকে তিন মাস ধরে যৌন নির্যাতন করার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিন শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। পলাতক তিন যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক হলেন- কিশোরগন্জের বাসিন্দা মো. রাহাত হোসেন, সিলেট সুনামগন্জের বাসিন্দা আবু হুরায়রা ও ভোলা সদরের বাসিন্দা আমিরুন ইসলাম।
রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে সোমবার রায়পুর সরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুল ইসলাম শিশুকে পরীক্ষা করে উন্নত চিকিৎসায় সদর হাসপাতালে পাঠান।
এ বিষয়ে শিশুর পরিবার থানায় মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রায়পুর ইউপি ও চরআবাবিল ইউপির মাঝখানে মিতালিবাজারে অবস্থিত আলমাদানী মডেল মাদ্রাসায়।
আরও পড়ুন: চুরি শেষে ডিম ভেজে ভাত খেয়ে গেল চোরেরা
ঘটনার পর উত্তম-মধ্যম দেওয়ার পর ওই তিন শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা এবং অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন শিশুর অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
শিশুর মা জানান, তিন বছর আগে হেফজ বিভাগে ভর্তি করান তার শিশুকে। মাদ্রাসার আবাসিক ভবনেই অন্য শিশুদের সঙ্গে থাকত তার ছেলে। সপ্তাহখানিক আগে শিশুটি বাড়িতে এলে আর মাদ্রাসায় যেতে চায় না। অনেক চাপাচাপি করার পর সে জানায় তিন শিক্ষক তাকে অনেক দিন ধরে পাশবিক নির্যাতন করে আসছে।
আরও পড়ুন: ভারী বস্তুর সঙ্গে আঘাতে ফারদিনের মৃত্যু: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন
সে রাতে ঘুমাতে পারে না, তার খুব কষ্ট হয়। আবাসিকের সব ছাত্র যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখনই ওই তিন লম্পট শিক্ষক তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করত। একপর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একদিন টয়লেটে প্রায় ২ ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে হয়।
এ ঘটনায় চরমোহনা গ্রামের বাসিন্দা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মুফতি ইসমাইল হোসেনকে (৩৫) জানালে তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কমিটির সভাপতিসহ সদস্যদের জানান। পরিচালনা কমিটির সামনেই প্রিন্সিপাল অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে জুতাপেটা করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেন। প্রিন্সিপাল ছাত্রটির বাড়িতে এসে শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
এ ঘটনায় রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে মাদ্রাসায় পুলিশ প্রেরণ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন। ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া জানান, ইউএনওর কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবির হোসেন এ ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন। তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।