ঘুমের ঘোরে শিক্ষিকাকে কুপিয়ে মারল দুর্বৃত্তরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২২, ০২:৫১ PM , আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৩২ PM
কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা রোকসানা খানম রুনাকে (৫২) নিজ বাড়িতেই ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ইংরেজী বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। তার স্বামী খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এলজিইডি’র যশোর চৌগাছার হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সোমবার (০৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ডি ব্লকের ২৮৫ বাসার দ্বিতীয় তলায় তার শয়ন কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, ছয়তলা বিশিষ্ট বাড়িটি ওই শিক্ষিকার নিজের। নিঃসন্তান ওই শিক্ষিকা দ্বিতীয় তলায় একাই বসবাস করতেন। ওই বাসার চতুর্থ তলায় থাকতেন ওই শিক্ষিকার মৃত ভাই এ কে এম নূরে আসলামের পরিবার।
নিহত রোকসানার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১৯৯৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়। তবে আমাদের কোনো সন্তান নেই। তারপরেও আমাদের পারিবারিকভাবে কোনো কলহ বা মনোমালিন্য ছিল না। রোকশানা চাকরি করতো তাই সে কুষ্টিয়ায় এবং আমি যশোর থাকতাম। গত রাতে তার সঙ্গে আমার কথা হয় যে, সকালে বিদ্যালয়ের কাজে যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাবে। আমি সোমবার সকাল ৯টার দিকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করেনি। পরে ভাতিজা নওরোজ কবির নিশাত আমাকে ফোন দিয়ে বলে ফুপুর রুম ভেতর থেকে আটকানো এবং ডাকলে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তারপর তারা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখে রোকশানা বিছানার ওপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
ভাতিজা নওরোজ কবির নিশাত জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুপু রোকশানা খানমকে তারা ডাকতে গিয়ে দেখেন দরজা ভেতর থেকে লক করা। অনেক ডাকাডাকি করার পরও দরজা না খোলায় তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ তাদের দরজা ভেঙে ফেলার জন্য বলে। দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তারা দেখতে পান দোতালার দক্ষিণ পাশের শয়ন কক্ষের বিছানার ওপর কাত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ পড়ে রয়েছে। মাথায় জখমের চিহ্ন। ওই ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, ড্রয়ার সবকিছু ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ, র্যাব, পিআইবি, ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক মাদরাসাছাত্র, পরীক্ষার্থী বহিষ্কার
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করেছে, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। দুর্বৃত্তরা দোতালার বারান্দার দরজা ভেঙে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে এবং হত্যাকাণ্ড শেষে আবার ওই দরজা দিয়েই পালিয়ে যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। সার্বিক বিষয় পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. এফতে খাইরুল ইসলাম বলেন, রোকশানা খানম তার স্কুলের একজন সিনিয়র ইংরেজীর শিক্ষিকা ছিলেন। একজন ভালো শিক্ষিকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তিনি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে শিক্ষিকা রোকশানা খানমের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।