তিনজন ধর্ষণের পর এসএসসি পরীক্ষার্থীকে তুলে দেয় ঢাকার বাসে
পরীক্ষা উপলক্ষে নতুন কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে মেয়েটিকে ডেকে নিয়েছিলেন হাফিজুল ইসলাম। পরে দূরপাল্লার নাবিল পরিবহনের কাউন্টারে রাখেন। সেখান থেকে একটি বাড়িতে নিয়ে তিনজন মিলে ধর্ষণের পর তাকে ঢাকাগামী বাসে তুলে দেয়। মেয়েকে উদ্ধারে বাবা-মায়ের কথায় হাফিজুলকে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান ফোন দিয়ে জানতে পারেন, নাবিল পরিবহনের নৈশ কোচে ঢাকার পথে রয়েছে মেয়েটি।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটে গেছে এমন রোমহর্ষক ঘটনা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিতে তার কেন্দ্রে থাকার কথা ছিল। সহপাঠীরা যথাসময়ে হাজিরও হলেও তখন একরাশ কষ্ট নিয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ছিল সে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিল। কারণ পরীক্ষার আগেই যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
পুলিশ বলছে, পরীক্ষা দেওয়ার মানসিক অবস্থাও ছিল না মেয়েটির। হাতীবান্ধা উপজেলার একটি বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শুরু হলেও সারাদিনই হাসপাতালে কেটেছে। সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক বলেন, মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পাশবিকতা ও পরীক্ষা না দিতে পেরে প্রচণ্ড ট্রমায় রয়েছে।
মেয়েটির মা বলেন, ‘হামার সর্বনাশ হইয়া গেছে। ছাওয়াটা তব্ধা নাগি গেছে। ওর বাবা ভ্যান চালায়। কেমন করি মামলা চালামো।’ তবে সব ঠিক থাকলে শনিবার থেকে মেয়েটি পরীক্ষা দেবে বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুন: ছাত্রীর মোবাইল ছিনিয়ে চবির চলন্ত শাটল থেকে লাফ তরুণের
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর প্রবেশপত্র আনতে মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়। পরে আর ফেরেনি। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে দূরসম্পর্কের আত্মীয় হাফিজুলের এসএমএস পান তার মা। হাফিজুল জানান, মেয়েটিকে লালমনিরহাটগামী ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মেয়েটির পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থ মেয়েটিকে গাজীপুরের চান্দুরায় নামিয়ে দিতে নাবিল পরিবহনের লোকজনকে অনুরোধ করেন এক আত্মীয়। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে আশুলিয়ার পুলিশ গত ২ সেপ্টেম্বর ভোরে চান্দুরা থেকে উদ্ধার করে তাকে। গাজীপুরে চিকিৎসা নিয়ে পরে হাতীবান্ধায় বাড়ি ফেরে সে।
বাকরুদ্ধ মেয়েটি ৭ সেপ্টেম্বর সব খুলে বলে পরিবারের সদস্যদের। সে জানায়, ১ সেপ্টেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে সে। এরপর তার মা গত ১৩ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এতে হাফিজুল ইসলাম (৩৫), নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার শামসুল হোসেন ওরফে বাবুল (৪৫) ও তছলিম উদ্দিন সরকারকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে। শামসুল ও তছলিমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার মেয়েটি আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মূল আসামি হাফিজুলকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।