দেখতে তাহির আর উদযাপনে উইলিয়ামস—কে এই স্পিনার

দীগ্বেশ রাঠির নোটবুক উদযাপন
দীগ্বেশ রাঠির নোটবুক উদযাপন  © সংগৃহীত

চুলের শেপ ইমরান তাহিরের মত। বেশ লম্বা, আর ঘাড় বেয়ে নেমেছে। দক্ষিণ আফ্রিকান লেগির মত ব্যান্ড দিয়ে আঁকড়েও রেখেছেন। তবে আরও চমক রয়েছে। তার বোলিং রান-আপ দেখলে দৃশ্যপট এক মুহূর্তেই পাল্টে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইনের স্টাইলে বোলিং করেন। 

আর উইকেট পাওয়ার পর উদ্যাপন? আরেক উইন্ডিজ কেসরিক উইলিয়ামসের নোটবুক উদ্যাপন। এই তিন মিলিয়েই লখনৌ সুপারজায়ান্টসের স্পিনার দীগ্বেশ রাঠি। তবে কেবল স্পিনার নয়; রহস্যময় স্পিনার আর রহস্যটুকু দিয়ে তিনি এরই মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন আইপিএলে সেরাদের কাতারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য রয়েছে তার।

শুক্রবার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে লখনৌর হয়ে পাঁচ জন বোলিং করেছেন। এর মধ্যে চারজনই ওভারপ্রতি ১০ বা এর বেশি রান খরচ করেছেন। শুধু একজনই ৪ ওভারে ২১ রান দিয়েছেন, ওভারপতি পাঁচের একটু বেশি। পাশাপাশি উইকেটও পেয়েছেন। তিনিই দীগ্বেশ। এখানে আরও স্মরণীয়, ২০৩ রান তাড়ায় নেমে ৬ উইকেটে ১৯১ রান তোলা মুম্বাইয়ের বিপক্ষে বোলিং করেছেন তিনি।

শুধু এই ম্যাচই না, লখনৌর হয়ে চলতি আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে কেবল একবারই এক ওভারে ৮-এর বেশি রান খরচ করেছেন। সবমিলিয়ে ৭ দশমিক ৬২ ইকোনমি রেটে ৬ উইকেট শিকার করেছেন।

দীগ্বেশ মূলত লেগ স্পিনার। তবে তার বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বিদ্যমান। অনেকটা কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্যারিবিয়ান স্পিনার নারাইনের মতো। ১২ রানে ম্যাচ জয়ের পর জানিয়েছেন, নারাইনকে দেখেই বোলার হয়েছেন তিনি।

তার ভাষ্যমতে, ‘সুনীল নারাইনের বোলিং দেখে বোলিংয়ের প্রেমে পড়ি। আমি ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করতে ও আউট করতে পছন্দ করি, যেমন নারাইনও। চাপের মুখে তিনি যেমন শান্ত থাকেন, তেমনই থাকতে চাই।’

লেংথের ওপর নিয়ন্ত্রণই দীগ্বেশকে রহস্যময় বানিয়েছে। আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৯৬টি ডেলিভারির মধ্যে ৮০টি ডেলিভারিই ‘গুড লেংথ’ কিংবা এর পেছনে পড়েছে। সবমিলিয়ে ৯৫ রান দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কেবল তিনটি ডেলিভারি খাটো লেংথে এবং ১৩টি ডেলিভারি ফুল লেংথে করেছেন।

দিল্লি প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে উত্থান দীগ্বেশের। পরে আইপিএলের মেগা নিলামে তাকে ৩০ লাখ রুপির ভিত্তি মূল্যে কেনে লখনৌ। অনুশীলন ম্যাচে নজর কেড়ে মূল একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার-ও দীগ্বেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।

কোচের মতে, ‘অন্য সব গ্রেট স্পিনারদের মতোই সে বোলিং করতে পছন্দ করে। সে যদি দিনে ১৬ ঘণ্টা বোলিং করতে পারত, তাহলে ১৬ ঘণ্টাই করত। সে সম্ভবত হোটেলের করিডরেও বল করে। সকালের নাশতায় বল করে, গোসলে বল করে, সব জায়গাতেই বল করে। বছরের পর বছর অনুশীলনের পুরস্কার পাচ্ছে সে।’

তবে দীগ্বেশকে নিয়ে দুশ্চিন্তার জায়গাও আছে। উইলিয়ামসের মতো নোটবুক উদ্যাপনে ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানার পাশাপাশি একটি ডিমেরিট পয়েন্টের শাস্তি হয়েছিল। আর নমন ধীরকে আউট করে ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানার পাশাপাশি দুটি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয়েছে। আরেকটি ডিমেরটি পয়েন্ট যোগ হলেই এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হবেন তিনি। তবে লখনৌর পেসার শার্দুল ঠাকুর মনে করেন, দীগ্বেশের মতো এমন চরিত্র ক্রিকেটেরই প্রয়োজন।

এ পেসার বলেন, ‘সে অসাধারণ বোলার। চরিত্রটাও বর্ণিল। খেলায় আমাদের এটাই প্রয়োজন। আমাদের এমন চরিত্র দরকার যে দলের হয়ে পারফর্ম করবে, নিজেকে প্রকাশ করতে ভয় পাবে না। সে সব সময়ই এটা করে এবং এটাই তার সবচেয়ে শক্তির জায়গা।’


সর্বশেষ সংবাদ