২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৯

জাতীয় নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে ৫ সুপারিশ

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকল্পে করণীয়’ শীর্ষক প্রেস কনফারেন্স  © সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে ৫টি সুপারিশ করেছে ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটি। আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটির আয়োজনে ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকল্পে করণীয়’ শীর্ষক প্রেস কনফারেন্সে সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়।

অনষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটির সভাপতি ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার রাশেদুল হক।সংগঠনটির সদস্য-সচিব ও সরকারের সাবেক সচিব এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মো: শরিফুল আলম অবস্থানপত্র তুলে ধরেন। 

ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একটি সংগঠন যা নির্বাচন পরিবীক্ষণে নিয়োজিত।  নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা এবং বিগত নির্বাচনসমূহের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে একটি ‘অবস্থানপত্রে’ সুপারিশসমূহ তৈরি করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটি কর্তৃক উপস্থাপিত অবস্থানপত্রে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে অগ্রাধিকারমূলক করণীয় তুলে ধরা হয়। সংগঠনটি মনে করে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ বাস্তবায়নে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সকল পক্ষকে এজন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ড. মো. শরিফুল আলম বলেন, অতীতের তিনটি (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর জাতি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায়। প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তাই এ অঙ্গীকারকে বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতা প্রদর্শন করতে হবে।

আরও পড়ুন : কড়াইল বস্তিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণে প্রস্তাব ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’, বললেন ফয়েজ আহমদ

পাঁচটি সুপারিশ হলো

প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন: বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতকরণে ভোটকেন্দ্রসমূহে অনলাইন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের বিকল্প নেই। প্রায় ৪৩,০০০ ভোটকেন্দ্রে অনলাইনভিত্তিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে—যা স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য অত্যন্ত যৌক্তিক। সময়ের স্বল্পতা বিবেচনায় কোন একটা একক প্রতিষ্ঠানকে সিসিটিভি স্থাপনের দায়িত্ব না দিয়েও নির্বাচন অগ্রাধিকার বিবেচনায় ডিপিএম (সরাসরি ক্রয়) পদ্ধতিতে ক্রয় বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে উপ-বরাদ্দ প্রদান করে এই কেনাকাটা দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব । সরকারের অধিকাংশ প্রকল্প যেখানে হাজার কোটি টাকার সেখানে দুইশত কোটি টাকার ব্যয়কে অতিরিক্ত আখ্যা দেয়া মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। তাছাড়া, একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য জাতির আকাঙ্খার বিপরীতে সিসি টিভি ক্যামেরা সংগ্রহ ও স্থাপন বাবদ কোন ব্যয়ই অতিরিক্ত বিবেচিত হতে পারেনা। নির্বাচনের পরে এই সিসিটিভি ক্যামেরা গুলো নির্বাচন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্কুলসমূহে ব্যবহার করা যাবে এবং অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচনেও পুনরায় ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বডি ওর্ন ক্যামেরা সংযোজন: প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কমপক্ষে দুইজন সদস্যের শরীরে বডি ক্যামেরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বদলি/পদায়ন: ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বদলি করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন শেষে ১৫ দিনের মধ্যে পুনরায় বদলি করতে হবে। যে সকল কর্মকর্তা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনে সমর্থ হবেন তাদের পুরস্কারস্বরুপ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করতে হবে ও ব্যর্থদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।  

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান: নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পূর্বেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এই অভিযান ভোট গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত জারি রাখা আবশ্যক, যেন কোন দল বা গোষ্ঠী নির্বাচনী পরিবেশকে বিঘ্ন ঘটানো বা ভোট কেন্দ্র দখলের মত অপকর্ম করার সুযোগ বা সাহস না পায়। 

নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রতি বিশেষ আহ্বান: নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত সরকারী কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সততা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কর্মচারিগণ যাতে যে কোন গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে সেজন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।