০৮ জুলাই ২০২৫, ১৭:১২

নীতিমালার অভাবে চাকরি ‘অনিশ্চয়তায়’ মেট্রোর শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড   © টিডিসি ফটো

তিন বছর ধরে নিয়ম করে অফিস করছেন মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তা সেকেন্দার (ছদ্মনাম)। কখনও সকালে, কখনও বিকেলে শিফট অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অথচ আজও জানেন না, এই চাকরিটা তার জন্য কতটা স্থায়ী। তার বেতন ঠিকমতো আসে, তবে নেই কোনো সার্ভিস রুল, নেই প্রমোশন বা বদলির নীতিমালা। এমনকি নেই কোন স্বচ্ছ ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিও।

সেকেন্দার জানান, সার্ভিস রুলের (নীতিমালা) জন্য তারা বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু প্রতিবারই শুধু আশ্বাস পেয়েছেন, বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বেতন বৈষম্য নিরসনে কিছুটা অগ্রগতি আনে কর্তৃপক্ষ। 

জানা যায়, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নামের এই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার প্রায় ১২ বছর পার হলেও এখনো ডিএমটিসিএল’র কোনো সার্ভিস রুলস নেই। দীর্ঘদিনেও প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী জনবল কাঠামো ও কর্মনিয়ম এখনও অনুমোদিত হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ জন জনবলের ওপর চলছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযুক্ত। ২০১৭ সালে অনুমোদিত অর্গানোগ্রামে ডিএমটিসিএলের স্থায়ী কর্মী সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫৬ জন। সেটি নতুন প্রস্তাবনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯১ জনে। 

আরও পড়ুন: যেভাবে সমুদ্রে তলিয়ে গেলেন চবির ৩ শিক্ষার্থী, জানালেন বেঁচে ফেরা ২ বন্ধু

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনেও কাঠামো কার্যকর করতে না পারার দায় প্রশাসনিক গড়িমসির। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সময়কালে সার্ভিস রুল নিয়ে কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালে অবসরপ্রাপ্ত এক সচিবের ‘বিতর্কিতভাবে’ এমডি পদ দখল করাকেই দেরির প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি ঘটলেও, চাকরির নিশ্চয়তা মিলছে না প্রতিষ্ঠানটির শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারীর।

এদিকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। যেখানে বলা হয়, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের এখনো সার্ভিস রুলস নেই, তাদের ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তা চূড়ান্ত করতে হবে। কিন্তু সেই সময়সীমা বহু আগেই পেরিয়ে গেলেও ডিএমটিসিএল এখনও এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে নির্দিষ্ট কোনো বিধিমালা বা নীতিমালা না থাকায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

তবে ডিএমটিসিএল বলছে, বর্তমানে বোর্ডের সুপারিশে গঠিত ভেটিং কমিটি প্রস্তাবিত রুল পর্যালোচনা করেছে। রুল অনুসারে, চার পরিচালক (প্রশাসন), অপারেশন, অর্থ এবং পরিকল্পনা, একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামোতে কাজ করবেন এমডির অধীনে। প্রতিটি বিভাগের অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক জেনারেল ম্যানেজার ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থাকবেন। 

আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ফল দেখতে পারবেন শিক্ষার্থীরা, সময় জানাল বোর্ড

অপরদিকে দীর্ঘদিনেও সার্ভিস রুল না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা হতাশা নিয়ে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, তৎকালীন এমডি আব্দুর রউফের সময় আমরা সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিই। ওই কর্মসূচির মাঝেই তার মেয়াদ শেষ হয় এবং তিনি দায়িত্ব ছাড়েন। পরে নতুন এমডি যোগদানের পর আমাদের আশ্বস্ত করা হয়, ৩০ দিনের মধ্যে সার্ভিস রুলস অনুমোদন হবে। কিন্তু এখন পাঁচ মাস কেটে গেলেও কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সার্ভিস রুল নয়, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও আমরা প্রায় বঞ্চিত। ঈদের সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও কোনো বিশেষ ভাতা নেই, নেই শিফট ডিউটির ভাতা, যাতায়াত ভাতা বা পর্যাপ্ত মেডিকেল ভাতা। হলিডে ডিউটির জন্যও যথাযথ প্রণোদনা পাওয়া যায় না।’ যে কোন সময় বড়ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানান তিনি।।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) উপ-প্রকল্প পরিচালক (গণসংযোগ) উপসচিব মো: আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, ‘একটি সার্ভিস রুল খসড়া তৈরি করা হয়েছে। যা বর্তমানে বোর্ড সভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’