কালোবাজারির অভিযোগ, আগামী এক মাসের সেন্টমার্টিনের সব টিকিট বিক্রি?
সরকারি সিদ্ধান্ত ও নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে ভ্রমণে ইচ্ছুক পর্যটকদের আগামী এক মাসের সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলামন বাহাদুর।
তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে পর্যটকদের জাহাজের সকল টিকেট মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত আগাম বিক্রি হয়ে গেছে, এমনকি এমভি কর্ণফুলী জাহাজের টিকিট আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বিক্রি হয়েছে।’ তবে এই টিকিট বিক্র নিয়ে চলছে ধোয়াশা। ন্যায্য মূল্যে কি টিকিট পাচ্ছেন পর্যটকরা ?
এর আগে বলা হয়েছে জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ টি জাহাজের সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। সামনে বাকি একটা মাসে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাহাজের কিছু টিকেট একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত দামে জাহাজের টিকেট বিক্রি করে যাচ্ছে পর্যটকদের কাছে।
আরও পড়ুন: অমর একুশে বইমেলা শুরু ২০ ফেব্রুয়ারি
অভিযোগ উঠেছে, সেন্টমার্টিনে ২ হাজার পর্যটকের যাতায়তকে পুঁজি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নানা এনআইডি ব্যবহার করে কিছু টিকেট অগ্রিম কেটে অতিরিক্ত টাকায় বিক্রি করছে। যা স্বীকারও করেছেন জাহাজ মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সেন্টমার্টিনে পর্যটনবাহি জাহাজ চলাচল। এ জাহাজ চলবে আগামি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। নানা কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। বর্তমান কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিনে ৬ টি জাহাজ চলাচল করছে।
জাহাজ মালিকেরা জানিয়েছেন, পর্যটকের চাপে মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত সব জাহাজের টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।
এর কারণ হিসেবে তারা জানান, আগে প্রতিদিন গড়ে ৭-১২ হাজার পর্যন্ত সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেতেন। তাও ৫ মাসব্যাপী। এখন শুধু ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস পর্যটক যাচ্ছে। তাও ২ হাজারের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পর্যন্ত জাহাজের টিকেট কাটতে নানাভাবে আসছেন। তারা টিকেট ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত জাহাজের সব টিকেটেই বিক্রি হয়ে গেছে।
এদিকে কিছু পর্যটক অভিযোগ করেছেন, জাহাজের টিকেট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। জাহাজের নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দিলে টিকেট মিলছে।
এ প্রসঙ্গে জাহাজ মালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘এবার টিকেট বিক্রি এবং পর্যটক যাতায়তে প্রশাসনের কঠোর নজরধারি রয়েছে। প্রতিদিনই প্রশাসন ঘাটে আসছেন। টিকেট বিক্রির সময় এনআইডি নম্বর ব্যবহার, ভ্রমণ পাস জরুরি। ফলে কালোবাজারে টিকেট বিক্রির সুযোগ নেই। তবে এক শ্রেণীর চক্র, তাদের বা বিভিন্ন জনের এনআইডি ব্যবহার করে অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার সংখ্যা খুবই কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজের টিকেট সংগ্রহ ও ভ্রমণ পাস নিয়ে অনেকেরই ভ্রমণ বাতিল হচ্ছে। এসব টিকেট সারাসরি ফেরত দিলে কিছু টাকা কম ফেরত পাবে। তাই ওই সব টিকেটও দালালরা ক্রয় করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। এব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে সকলকে।’
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ব্যাপারে গত ২২ অক্টোবর ১২টি নির্দেশনাসহ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
সরকারি সিদ্ধান্ত মতে বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ ছিল। গত নভেম্বর থেকে আগামী মাসের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট তিন মাস দ্বীপটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে পর্যটকদের মানতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা।
সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে, নভেম্বরে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপটি ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ থাকবে।
এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
তথ্য অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন না।
পর্যটকদের ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়–বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।