০৭ জুলাই ২০২৫, ১৯:২০

মাদ্রাসাশিক্ষার্থী সুমাইয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

মানববন্ধনে রোয়াইলবাড়ী ফাজিল দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী অংশ নেন  © টিডিসি

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের কথা বলে দশম শ্রেণির মাদ্রাসাশিক্ষার্থী সুমাইয়াকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিয়ের করতে অস্বীকৃতি জানালে সুমাইয়া বিষ পানে আত্মহত্যা করে। এর প্রতিবাদে এ ঘটনার বিচার ও অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।

ভিকটিম সুমাইয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নের রোয়াইলবাড়ী গ্রামের শাহাব উদ্দিন ও জোসনা আক্তারের মেয়ে।সে রোয়াইলবাড়ী ফাজিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম একই ইউনিয়নের নিলম্বরখিলা গ্রামের সাবেক মেম্বার আরজু ছেলে।

আজ সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মানববন্ধনে অংশ নেন রোয়াইলবাড়ী ফাজিল দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘আমার বোন খবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার বোন মরল কেন, প্রশাসন বিচার চা’, ‘বিচার চাই, বিচার চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করো’।

এ সময় কান্নাভেজা কণ্ঠে বক্তব্য দেয় সুমাইয়ার সহপাঠীরা। তারা বলে, ‘আমরা এখন ক্লাসে যেতে ভয় পাই। সুমাইয়া ছিল আমাদের বন্ধু, আমাদের মতোই একজন। ওর সঙ্গে এ রকম নিকৃষ্টতর ঘটনার জন্য যত দ্রুত সম্ভব ধর্ষককে আইনের আওতায় এনে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া বিচারের প্রার্থনা করি। আমরা চাই হত্যাকারী যেন দ্রুত ফাঁসি হয়।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে  বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুর রহমান ভূঞা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের মৃত্যু অত্যন্ত হ্নদয়বিদারক ঘটনা। আমি দোষী ব্যাক্তির সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।’

আরও পড়ুন: ৪র্থ মাইগ্রেশন চান মেডিকেল শিক্ষার্থীরা, অধিদপ্তর বলছে— ‘নীতিমালায় নেই’

এ সময় সুমাইয়ার বাবা শাহাব উদ্দিন বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে কিছুই বুঝত না, বই আর খেলা ছাড়া কিছু জানত না। কেড়ে নেওয়া হয়েছে আমার বুকের ধন। আমি চাই, এই ঘাতকের ফাঁসি।’

উল্লেখ্য, এলাকাবাসী ও পুলিশের বরাতে জানা যায়, উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের সুমাইয়া নিলম্বরখিলা গ্রামের সাবেক আরজু মেম্বারের ছেলে আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সুমাইয়াকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার মেলামেশা করার পর সম্পর্কের ইতি টানতে চায় ছেলেটি। গত ২৯ জুন তাকে রোয়াইলবাড়ি বাজারে ডেকে এনে তাদের সম্পর্কের ইতি টানতে বলেন। এতে মেয়েটি রাজি না হওয়ায় ছেলেটি মেয়েটিকে মারধর করে। তার সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ সহ্য করতে না পেরে অভিমান করে ওই দিনই সকালে সুমাইয়া ঘরে থাকা বিষ পান করে। পরে থাকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব  চিকিৎসক তাকে  ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেন। তার শরীরের অবস্থার আরও অবনতি হলে ১ জুলাই সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন ডাক্তার। ঢাকা নেওয়ার পথে বেলা ১১টার দিকে রাস্তায় মারা যান। সুমাইয়া মারা যাওয়ার আগে নিজ হাতে লিখে গেছে মৃত্যুর কারণ ।