২৭ জুন ২০২৫, ১২:১৩

পারকি সমুদ্রসৈকত ধ্বংসের মুখে, হুমকিতে ব্যবসা ও পর্যটন

ক্রমাগত ভাঙছে পারকি সমুদ্রসৈকত  © টিডিসি

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পারকি সমুদ্রসৈকত এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। একসময়ের মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্ত, সারি সারি ঝাউগাছ আর শান্ত পরিবেশ আজ অতীত স্মৃতি। ক্রমাগত ভাঙন, সমুদ্রের দানা বাঁধা ঢেউ এবং অব্যবস্থাপনার কারণে সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের দক্ষিণ অংশে ঝাউগাছ একের পর এক উপড়ে পড়ছে। অনেকে ইতোমধ্যে সাগরের গর্ভে তলিয়ে গেছে। লুসাই পার্কের সীমানা দেয়াল ভেঙে ঢেউয়ের পানি ঢুকছে পাশে থাকা ডোবায়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দোকানপাট ও স্থানীয়দের মালিকানাধীন জমি। প্রতিরক্ষামূলক কোনো বাঁধ না থাকায় ঢেউয়ের আঘাতে স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, একসময় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় থাকা পাথরের দুটি বাঁধ সৈকতকে সুরক্ষা দিত। কিন্তু একটি বাঁধ ধসে পড়ায় ঢেউ এখন সরাসরি পারকি সৈকতে এসে আঘাত হানছে। জেলেদের জাল ফেলা ও বেড়িবাঁধে রক বসানোয় প্রাকৃতিক জোয়ার-ভাটার গতি ব্যাহত হচ্ছে, ফলে ঢেউয়ের তীব্রতা বাড়ছে।

২০০০ সালের আগের পুরোনো ঝাউবনের অধিকাংশই আজ বিলীন। পরবর্তী সময়ে ১৩ একর জায়গায় নতুন করে গাছ লাগানো হলেও সেগুলোর অবস্থাও সংকটাপন্ন। ফলে সৈকতের প্রাকৃতিক সুরক্ষা প্রায় নিশ্চিহ্ন।

আরও পড়ুন: স্কলারজিপিএস র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে গোবিপ্রবির ফার্মেসি বিভাগ

পর্যটক রিফাত হোসেন বলেন, ‘প্রতিবার এসে দেখি পরিস্থিতি আরও খারাপ। এখন গাছ নেই, পার্ক ভেঙে যাচ্ছে, দোকানপাটে পানি ঢুকছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কিছুই বাকি থাকবে না।’

ব্যবসায়ী মো. আকবর বলেন, ‘লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু সৈকতের অবস্থা দেখে আতঙ্কে আছি। পর্যটক কমে যাচ্ছে, আয় কমে গেছে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না।’

বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. কাশেম বলেন, ‘এই সৈকত ঘিরে শত শত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। সৈকতের ক্ষতি মানে আমাদের অস্তিত্বের সংকট। দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে জানানো হবে। সৈকত রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন: জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম-জন্মতারিখ ভুল, বেতন বন্ধ ৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক জানান, পারকি বিচ থেকে টানেল পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো তা অনুমোদনের অপেক্ষায়। স্থানীয়দেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন পারকি সৈকতকে রক্ষায় প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি। নতুবা অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে এ সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রটি।