সড়ক যেন যানজটের ফাঁদ: সিএনজি দখল, অবৈধ পার্কিংয়ে নাজেহাল জনজীবন
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার দখলদারিত্ব এবং রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ পার্কিং এখন এলাকাবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জয়কালীবাজার থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কজুড়ে প্রতিদিনই তীব্র যানজটে ভোগছেন পথচারী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ। অব্যবস্থাপনা, নজরদারির অভাব ও অবৈধ দখলদারিত্ব মিলে পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
গতকাল সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জয়কালীবাজার থেকে শুরু করে পুরো সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে সেখানে রাখা হয়েছে দোকানের মালামাল। বাকি অংশে সারি সারি সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে—কোথাও যাত্রী ওঠানামা, কোথাও চালকদের আড্ডা। পুরো সড়ক কার্যত সংকুচিত হয়ে একটি ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
জয়কালীবাজারের শেষপ্রান্তে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ঢালাই কাজ শুরু হলেও তা ফেলে রাখায় বর্তমানে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে সাধারণ যানবাহনের গতি কমে গেছে, বাড়ছে দুর্ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদা বেগম জানান, সকাল-বিকেল হাঁটা যায় না। কোথাও নামার জায়গা নেই, শুধু গাড়ি আর মালপত্রে ঠাসা।
এক চালক বলেন, ‘আমাদের আলাদা কোনো স্ট্যান্ড নেই। তাই রাস্তার উপরেই গাড়ি দাঁড় করাতে হয়। যাত্রীদেরও তো জায়গা দরকার।’
অন্য একজন বলেন, ‘সব দোষ আমাদের ঘাড়ে দেওয়া হয়। অথচ আমাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা রাখা হয়নি।’
শুধু বাজার নয়, উপজেলা পরিষদের মূল ফটক, আনোয়ারা সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সামনেও একই দৃশ্য। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটে নিয়মিত। অভিভাবক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রশ্ন তোলেন, ‘স্কুলের সামনে যদি এভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে?’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। অবৈধ পার্কিং বা দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত ট্র্যাফিক পুলিশের।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘জনবল সংকট আমাদের বড় সমস্যা। পুরো উপজেলায় এক-দুইজন অফিসার দিয়ে সব সামলানো সম্ভব নয়। অভিযানে গেলে কিছু গাড়ি সরানো যায়, কিন্তু পরদিন আবার সব আগের জায়গায় ফিরে আসে।’
সওজ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘জয়কালীবাজার এলাকায় রাস্তার কাজ শুরু করলেও বর্ষার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। শিগগিরই পুনরায় কাজ শুরু হবে। গর্ত মেরামতের প্রক্রিয়া চলছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, ‘রাস্তায় বিকেল হলেই শুধু হর্ন আর ধোঁয়ার রাজত্ব। এখানে যে কেউ আসলে বুঝবে না—মানুষ কেমন কষ্টে আছে।’
সাধারণ মানুষের ভাষ্য, একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নিয়মিত অভিযান হয় না কেন? অবৈধ পার্কিং বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ কোথায়?’
আরও পড়ুন: গ্যাস সংযোগে ঘুষ দাবি তিতাস গ্যাস ম্যানেজারের, বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
এই সমস্যা শুধু সড়কে যান চলাচলেরই নয়—এটি এখন জননিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলার ব্যাপার। যত্রতত্র পার্কিং, দখলদারিত্ব ও অর্ধসমাপ্ত উন্নয়নকাজ নিয়ে যখন এলাকাবাসী হাহাকার করছে, তখন কর্তৃপক্ষের কাঁধে কেবল দায় চাপিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আর নেই। প্রয়োজন দ্রুত, কার্যকর এবং স্থায়ী সমাধান।