মাস্টার্স শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে আঁখি এখন স্বাবলম্বী

হ্যান্ড পেইন্টের ছোঁয়ায় কাপড়ের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলেন আঁখি রায়
হ্যান্ড পেইন্টের ছোঁয়ায় কাপড়ের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলেন আঁখি রায়  © টিডিসি ফটো

একসময় পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। এ জন্য শুরু করেন হ্যান্ড পেইন্টের কাজ। আস্তে আস্তে ব্যবসায় লাভ আসতে থাকে। এখন অনলাইন ও অফলাইন দুই প্ল্যাটফর্মেই পোশাক বিক্রি করছেন আঁখি রায়। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে নিজ অবস্থানে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এই নারী উদ্যোক্তা।

আঁখি রায় ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের মুছাকান্দি গ্রামের দিপক মোহরী বাড়ির মৃত ভজন চন্দ্র শীলের মেয়ে। তিনি ভোলা সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেছেন। তবে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়াই ছিল মূল লক্ষ।

আঁখি ব্যবসার পাশাপাশি এখন অনেককে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবারের তরুণীরা হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করে আয় করছেন।

আঁখি জানান, আগে তার বাবা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন, মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তার একমাত্র বড় ভাই রাপ্পী রায় টিউশনি করতেন। এভাবেই ভালো চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু করোনাকালীন তাদের পরিবারের নেমে আসে আর্থিক অভাব। ওই সময় বাবার ব্যবসা চলছিল না। ঠিকমতো বড় ভাইয়েরও টিউশনি ছিল না।

এরপর পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করতে ঘরে বসেই আয়ের চিন্তা করেন তিনি। ২০২১ সালে ছোট পরিসরে শুরু করেন হ্যান্ড পেইন্টের কাজ। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইন ও অফলাইনে মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার ব্যবসা। কিন্তু আবারও ২০২৩ সালের দিকে বাবা ভজন চন্দ্র ক্যান্সারে আক্রোন্ত হন। বাবার চিকিৎসা খরচ জোগাতে ধারদেনা ঋণে জড়িয়ে পরে তার পরিবার। ওই বছরই তার বাবার মৃত্যু হয়।

তার ব্যবসা ও ভাইয়ের টিউশনির অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে শুরু করেন তারা। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি বড় ভাই ব্র্যাকে চাকরি শুরু করেন।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে তার হ্যান্ড পেইন্টের কাজ ভালোই চলছে। নতুন নতুন বাহারি রকমের ডিজইন করছেন শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, দুই পিস, ওয়াস পিস, বেবি সেট, ওয়াল মেড, মাটির তৈরি সামগ্রী ও বিয়ের পিঁড়িতে। অনলাইন ও অফলাইনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে হয়েছে তার কাজ। ঈদ, পয়লা বৈশাখ ও পূজায় সময় প্রায় এক লাখ টাকার হ্যান্ড পেইন্টের পোশাক বিক্রি করেন তিনি।

পুরো মাসে ভালোই অর্ডার পান আঁখি। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে তাদের সংসারে। বর্তমানে পরিবারের আর্থিক জোগান দিচ্ছেন তিনি। আঁখি এই কাজটি করতে চান পাশাপাশি স্থানীয় অনেক দরিদ্র পরিবারের তরুণীদের প্রশিক্ষণও দিতে চান। তারও যেন হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করে আয় করতে পারেন।

আঁখির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করছেন একই ইউনিয়নের ভোটের ঘর এলাকার ও ভোলা ইলিশা মডেল কলেজের ছাত্রী নূপুর আক্তার।

তিনি জানান, আঁখি রায়ের কাছ থেকে তিনি ২০২৪ সালে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিজেই ঘরে বসে অনলাইন ও অফলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তার আয়ের টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনা খরচ নিজেই জোগাচ্ছেন। এছাড়াও প্রতি মাসেই তার বাবাকে সংসারের জন্য টাকা দিচ্ছেন। তার বাবা ছোট ব্যবসা করেন।

একই এলাকার কলেজ ছাত্রী আছিয়া আক্তার পপি জানান, তারা চার বোন তাদের কোনো ভাই নেই। বাবা দিনমজুরের কাজ করন। বাবার স্বল্প আয়ে তাদের সংসার ও পড়াশোনা খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হয়। তাই তিনি আঁখি রায়ের কাছ থেকে কাজ শিখেছেন যেন নিজে কিছু করতে পারেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তার সঙ্গেই কাজ করছেন। প্রতি হ্যান্ড পেইন্টে কিছু টাকা পাই সেই টাকা দিয়ে আমার পড়াশোনা খরচ আমি নিজেই চালাই।

আরেক তরুণী মুন্নী আক্তার জানান, তার বাবা ভ্যানচালক। অনেক কষ্টে তাদের সংসার চলে। এ জন্য তিনি আঁখি রায়ের কাছে এসে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ শিখছেন। এ ছাড়া আরও অনেক তরুণী পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে আঁখির কাছে কাজ শিখছেন। তাদের ইচ্ছা কাজ শিখে আঁখির মতো ঘরে বসেই হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করে আয় করবেন।

ভোলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন জানান, নারীদের উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য ভোলাতে ৫টি ক্যাটাকরিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে ওই নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য বিসিক, পল্লী উন্নয়নসহ বিভিন্ন সরকারি ঋণ দেওয়ার সংস্থার সঙ্গে লিংক করে দেন। তাদের ঋণ সহায়তা পাওয়ার ব্যপারেও তারা সহযোগিতা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ