বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবিতে চাকরিপ্রত্যাশীদের স্মারকলিপি প্রদান

স্মারকলিপি জমা দিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীরা
স্মারকলিপি জমা দিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীরা  © ফাইল ফটো

করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। রবিবার (৯ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়। বেকার যুবকরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানিয়েছে। 

স্মারকলিপিটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো, আমরা চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এদেশের সংবিধানকে চূড়ান্ত আইন মনে করি। আমরা গর্বিত এই ভেবে যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে বর্তমান সরকার করোনাকালীন পরিস্থিতি শক্তভাবে মোকাবেলা করে চলেছে যা সারা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত করোনাকালীন প্রণোদনা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখানে উল্লেখ্য যে, কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবা অন্য সকল সেক্টরের মানুষের মতো চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মকেও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিগত ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার সাথে বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার সরকারি চাকরির সার্কুলার ও একই সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এক বছরের অধিক সময়কাল জুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে (সেটিও আবার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে) এবং ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারির মতো মাত্র কয়েকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে দেখা গেছে এই প্রজন্মের অনেকেই তাদের জীবনের প্রায় দেড় বছর হারিয়ে ফেলেছেন এবং এর স্থায়িত্ব আরও দীর্ঘ হতে যাচ্ছে, যেহেতু দেশে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলমান। করোনার প্রভাবে দেরিতে কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসার পরে এমন চিত্র দেখা গেছে অনেকেই ৫/১০ দিন, এক বা দুই মাসের জন্য ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনই করতে পারেন নাই। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করলে দেখা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হলেও সরকারি ডাক্তারদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। অন্যদিকে বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর দেওয়া হয়।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় কয়েক লক্ষ তরুণ (করোনার শুরুর সময়ে যারা ২৮+ বয়সের ছিলো) চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই ৩০ এর গন্ডি অতিক্রম করবে। করোনাকালীন এই ক্ষতি কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যে ছেলেমেয়েরা ২৬ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই করোনা শুরুর সময় থেকে আশায় বসে আছে চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে, তারাও এই দেড় বছর হারাতে চলেছে। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রচলিত যে ৩০ বছর বয়স অবধি আবেদনের সুযোগ পাওয়ার কথা করোনার আঘাত কিন্তু প্রকৃতই সেই সুযোগ দিচ্ছে না। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , যখন গড় আয়ু ছিল ৫৫ বছর তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭, অবসরের বয়স ছিল ৫৭ বছর। ১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২৭ থেকে করা হলো ৩০ বছর। তখন ১৯৯১ সালে গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর। এরপর ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের এই ২-৩ বছর বাড়ার কারণে এই সময় তেমন জব সার্কুলার হয়নি। ১৯৯১ থেকে ২০২১ এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩ বছর।

কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ে নাই এই ৩০ বছরেও! প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিমাণ ৮৭% কমে ১৩% এ উপনীত হয়েছে; দেড় লাখ পরীক্ষার্থী চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারিয়েছেন এই করোনাকালীন অচলাবস্থার মধ্যে যা এদেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বেকারত্বের হার ২০% থেকে ৩৫% এ উন্নীত হয়েছে৷ করোনা চলাকালীন সময়ে ২০২০ সালে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছিলো যাদের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে আসন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে তাদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে। আপনার জ্ঞাতার্থে আমরা জানাতে চাই যে বেশিরভাগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতেই সেই নীতি অনুসরণ করা হয়নি। হাতেগোনা কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল যেগুলো বেশিরভাগই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির। অতি সম্প্রতি মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের গণমাধ্যমে দেওয়া ব্যক্তব্যে আবারও বয়স সমন্বয় বা ব্যাকডেট এর কথা শোনা গেলেও সেইদিন ও পরের দিন চাকরির সার্কুলার এসেছে সার্কুলার প্রকাশের ডেট থেকেই। আসলে বয়স সমন্বয়ের মাধ্যমে সকল বয়সী শিক্ষার্থী তথা চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতপূরণ সম্ভব নয়।

চাকরিতে আবেদনের বয়স স্থায়ীভাবে ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করলে সকলেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সময় ২ বছর ফিরে পাবে।

চাকরি প্রত্যাশীদের দাবি

করোনায় শিক্ষার্থীদের প্রায় ২ বছর সময় জীবন থেকে অতিবাহিত হতে চলেছে। তাই করোনাকালীন সরকারের সকল প্রণোদনার পাশাপাশি মুজিববর্ষের ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে আমরা বেকার যুবকরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।

অতএব, আকুল আবেদন এই যে, আপনি এই রাষ্ট্র ও সরকারের একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব্যক্তি হিসেবে বর্তমান যুব প্রজন্মের ক্ষতিগ্রস্থতা উপলব্ধি করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ এ উন্নীত করার ব্যাপারে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বাধিত করবেন তথা এই প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে রক্ষা করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ