চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর চান ৭২ শতাংশ চাকরিপ্রার্থী
- এম টি রহমান
- প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০৫ AM , আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৩৮ AM
সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা পুর্নবিন্যাসের সময় এসেছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ কিংবা ৪০ বছর করা যেতে পারে। এ ছাড়া অবসরের বয়সও ৬৫ করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রীর এই বক্তব্যের আলোকে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ফেসবুক গ্রুপে চাকরিপ্রার্থীদের নিকট তাদের মতামত জানতে একটি পোলের আয়োজন করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, ৭২ শতাংশই চান সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হোক। আর ১২ শতাংশ চান চাকরিতে প্রবেশের বয়স হোক ৩২ বছর।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের নিকট প্রশ্ন ছিল, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ কিংবা ৪০ বছর করা যেতে পারে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত বছর হওয়া যুক্তিযুক্ত বলে আপনি মনে করেন?’
এই পোলে প্রায় পাঁচশ’ জন তাদের মতামত জানিয়েছেন। সেখানে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৬৩ জন, যা মোট অংশগ্রহণকারীর ৭২ শতাংশের বেশি। আর ৩২ বছরের পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৩ জন, যা মোট অংশগ্রহণকারীদের ১২ শতাংশেরও বেশি।
এছাড়া চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ বছর চেয়েছেন ৩৪ জন। পোলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যা প্রায় সাত শতাংশ। আর বিদ্যমান চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছরকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন ২৬ জন, যা অংগ্রহণকারীদের পাঁচ শতাংশের বেশি। আজীবন চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ চেয়েছেন সাত জন, যা মোট পোলে অংশ নেয়াদের প্রায় এক দশমিক ৪০ শতাংশ।
পোলে অংশ নেয়া ইয়াসিন আলী লিখেছেন, ‘দক্ষ জনশক্তি সরকারি কাজে লাগাতে ৩৫ এর বিকল্প নেই। একজন গ্র্যাজুয়েট অনার্স/মাস্টার্স শেষ করে যদি বাইরে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে যায়, তাহলে তার ডিগ্রি শেষ করে দেশে আসতে আসতেই ৩০ পার হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তার দক্ষতাকে সরকারি/বেসরকারি সেক্টরে কাজে লাগাতে হলে বয়স বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।’
তিনি লেখেন, ‘বয়স ৩০ হওয়ার কারণে একজন চাকরিপ্রার্থী অনার্স শেষ করেই চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। যার কারণে তার বয়স ৩০ না হওয়া পর্যন্ত সে সরকারি চাকরি ছাড়া অন্য কোন কাজে ঢোকে না। ফলশ্রুতিতে বয়স ৩০ এর মধ্যে সে যদি সরকারি চাকরি না পায়, ৩০ পার হওয়ার পরে সে একজন অদক্ষ বেকারে পরিণত হয়।’
ইয়াসিন আলীর মতে, ‘বয়স ৩৫/৪০ করা হলে-কেউ যদি ২৫ বছরে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে তাহলে সে সম্ভব হলে শুধু সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেবে অথবা অন্য কোনো কাজে ঢুকে পাশাপাশি সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে, কারণ হাতে যথেষ্ট সময় থাকবে। ফলশ্রুতিতে ৩৫ পার হলে সে যদি সরকারি চাকরি নাও পায় তারপরও সে একজন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে! পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তিও সরকারি কাজের সুযোগ পাবে।’
বায়জিদ শেখ নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে, শিক্ষার বর্তমান হার ৭৪.৭ থেকে আগামী দশকে ১০০ জানার প্রত্যাশায় রইলাম। আমাদের নীতি নির্ধারকরা অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে শতভাগ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বিকল্প নেই। এছাড়া, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদধারী নাগরিক বাদে তথাকথিত অশিক্ষিত নাগরিকদের মধ্যে কতজন বেকার তা জরিপ করার সময় এসেছে বলে মনে করছি।’
ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমার মতে, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫-৪০ বছর করা যেতে পারে। অবসরের বয়সও ৬৫ করে পুনর্বিন্যাসের সময় এসেছে। অনেক চাকরিতে এটা আছে। এটা নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ আছে।’
এম এ মান্নান বলেন, করোনার আগে বেকারের সংখ্যা ছিলো ২০ শতাংশ। তবে করোনার কারণে অনেকের কাজ নেই। সিপিডি ও পিআরআইসহ বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে ফের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় এখন আর ৩৫ শতাংশ নেই, তবে ২০ ভাগেও আসেনি। এটা ২২ থেকে ২৫ শতাংশ হবে।
তিনি বলেন, পশ্চিমা যারা উন্নত তাদের বয়সসীমা নেই। আমরা এখনো ওই পর্যায়ের উন্নত হইনি। কোন বাধা না থাকলে আমাদের জন্য বেশি উদার হয়ে যাবে। তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বাড়ানো উচিৎ, যদিও এটা সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার বলে জানান তিনি।