আমরণ অনশনে অসুস্থ ৩৫ প্রত্যাশীরা, হাসপাতালে ভর্তি ৪

(বাঁ থেকে) প্রেসক্লাবে আমরণ অনশনে আন্দোলনকারীরা, হাসপাতালে ভর্তি একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে
(বাঁ থেকে) প্রেসক্লাবে আমরণ অনশনে আন্দোলনকারীরা, হাসপাতালে ভর্তি একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে  © টিডিসি ফটো

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বসয়সীমা ৩৫ বছর করাসহ চার দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন ৩৫ প্রত্যাশীরা। তাদের এ কর্মসূচীতে এখন পর্যন্ত ৪ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন এবং রেশমা আক্তারের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) চতুর্থ দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। এতে দ্বিতীয় দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন এবং রেশমা আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ তাদের সঙ্গে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দেক আলী রাসেল ও উজ্জল নামে আরো দু’জন যুক্ত হয়েছেন ।

অসুস্থ সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতাল (ঢামেক) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্রকল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী।

মিয়াজী বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করাসহ চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কাফনের কাপড় পরে গণ অনশন করেছি। অথচ ১০ দিন পার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় দেশের প্রায় ২৮ লাখ শিক্ষিত যুবসমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া আজকে বিকেলে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রেশমা আক্তার ও সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ বেশ কয়েকেজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘দাবি আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো আশ্বাস না পাওয়া গেলেও আমাদের বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা আশা করি, দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ করা হবে’।

এর আগে দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছিল আন্দোলকারীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কোন আশ্বাস না পাওয়ায় টানা ১০ দিন গণঅনশন শেষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছে ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, সরকার ৩৫ চাইদের দাবি না মানায় মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছি। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে কাফন সমাবেশ ও গণঅনশন চালিয়ে আসছেন চাকারি বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশীরা।

আন্দোলনকারীরা বলেন, সেশটজটে যে ৪ বছর হারিয়েছে কে আমাদের ফিরিয়ে দিবে এই সময়গুলো। আজ বাংলাদেশ মানুষের গড় আয়ু ৫৭ থেকে ৭৩ হয়েছে তবে কেন আবেদনের বয়সসীমা বাড়বে না। বাড়ানো হয়েছে অবসরের বয়সসীমা তবে কেন আবেদনের বয়সসীমা বাড়বে না। বিশ্বের সাথে উন্নয়নের তাল মিলিয়ে চললে তবে কেন আবেদনের বয়সসীমা বাড়বে না।

এর আগে গত শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকে নিজেদের হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় ৩৫ প্রত্যাশী সকলের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ লক্ষ করা করা গেছে। পাশাপাশি তাদের ‘আমরা সার্টিফিকেট চাই না, চাকরির বয়স ৩৫ করে দিন’ ‘আমাদের মেয়াদ শেষ, আমাদের সুযোগ দিন’ এসব বাক্য বলতে দেখা গেছে।

তাদের ৪ দফা দাবি হলো- চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীত করা; চাকরির আবেদন ফি কমিয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা; চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়া ও চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

আন্দোলনকারী বলছে, বর্তমান সরকারের ইশতিহার অনুযায়ী তাঁরা ক্ষমতায় আসলে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন ‘৩৫’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার বিষয়ে তোমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত না জানিয়ে ৪১ তম বিসিএসের সার্কুলার দিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যার কারণে দেশব্যাপী লক্ষাধিক ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ