অব্যাহতি পাওয়া এসআই বললেন— একটি স্বপ্নের মৃত্যু
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ PM , আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ PM
রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত আরো ৫৮ এসআইকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ‘অভিযোগে’ অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। এ নিয়ে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩১০ জন এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হল। তাদের সবাই নিয়োগ পেয়েছিলেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে শোকজ করা হয়। এর আগে তাদেরকে দেওয়া শোকজ নোটিসের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ৫৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অব্যাহতি পাওয়াদের একজন রাফিন হোসেন অনিক। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি এসআই পদে যোগদান করেছিলেন। এ ঘটনা তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফেসবুকে ‘একটি স্বপ্নের মৃত্যু’ শিরোনামে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নিচে পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরের ট্রেনিং শেষ করে আজকে নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে খুশি মনে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল অথচ যাচ্ছি অব্যাহতিপত্র (বহিষ্কার আদেশ) আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের এক পৃথিবী সমান দুশ্চিন্তা আর সাত আসমান-জমিনসম কষ্ট বুকে নিয়ে।
মাঝেমধ্যে পুলিশ একাডেমির একেকটা দিন ১ মাসের মত দীর্ঘ মনে হয়। এরকম ৩৬৫টা দিন যে কত বেশি কষ্ট, পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে পার করেছি তা একমাত্র আল্লাহ এবং আমিই জানি। অনেকবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, একবার তো পড়ে গিয়ে দুই হাঁটুতে মারাত্মক জখম হয়েছিলো, পা বাঁকা করতেও পারছিলাম না কয়েকদিন তাও ১টা দিনের জন্য মেডিকেলে ভর্তি থাকিনি। প্রতিটা দিন ভোর রাত থেকে শুরু করে রাত ৯টা পর্যন্ত ট্রেনিংয়ের শিডিউল অনুযায়ী প্রতিটা কাজেই উপস্থিত থেকেছিলাম। ইচ্ছা ছিল ৩৬৫ দিন থেকেই প্রথম দলের সাথেই বের হবো যত কষ্ট হওয়ার হোক, ৩৬৫ দিন পার করলাম ঠিকই তবে প্রাপ্তির খাতা শূন্য।
অব্যাহতির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে একদিন ক্লাসে বসা নিয়ে হৈচৈ ও অমনোযোগী (যা প্রকৃতপক্ষে ঘটেইনি)।
যে ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন এটা ৫ বছর আগে স্টোরিতে দিয়েছিলাম, এছাড়াও আমার ক্লাসমেট, শিক্ষক হতে শুরু করে আমার কাছের প্রতিটা মানুষই জানে এই জবের প্রতি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই কত বেশি প্যাশনেট ছিলাম। নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করেছিলাম। ডিপার্টমেন্টাল রেজাল্টও ভালো ছিল, অনার্সে ৩য় স্থান অর্জন করেছিলাম, আর মাস্টার্সেও প্রথম সারিতেই ছিলাম।
বর্তমান রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার কাছে আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, আমি যদি এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১১টা ধাপের একটাতেও যোগ্যতা ছাড়া উত্তীর্ণ হয়ে থাকি এবং আমার ছাত্রজীবনে বা কখনো কোনো খারাপ কাজের সাথে ১ দিনের জন্যও সংশ্লিষ্ট থাকি তাহলে তা প্রকাশ করুন, তখন আমি ফাঁসির মঞ্চে যেতেও প্রস্তুত থাকবো, এখন বুকের মধ্যে যে যন্ত্রণা টা হচ্ছে তার চাইতে হয়তো মৃত্যুই শ্রেয়।
আর যদি তা না পারেন তাহলে এইসব মিথ্যা বানোয়াট অজুহাত না দেখিয়ে সরাসরি বলুন কেন অব্যাহতি দেওয়া হলো আমাকে।
আম্মা ছোট থেকেই চাইতো আমি পড়াশোনা করে ভালো কিছু করি, কোনো ঝামেলাতে যেন না জড়াই, তাই ছোট থেকেই আমাকে নানু বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করিয়েছে, এসএসসির পর ঢাকায় কলেজে ভর্তি হই তারপর রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পড়াশোনা।
যখন আমি, আমার এবং আমার পরিবারের স্বপ্ন পূরণের ঠিক দ্বারপ্রান্তে তখন কেন আমার সাথে এই অন্যায় অবিচার করা হলো? কেন আমাকে ও আমার পরিবারকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর কে দিবে আমাকে?
আল্লাহর কাছে বলে রাখলাম, যদি তিনি আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে যেন এই অন্যায় অবিচারের বিচার একদিন না একদিন এই বাংলার মাটিতে দেখে যাওয়ার সুযোগ দেন।
“তোমরা যদি জমিনে জুলুম লেখো,
আসমানে ইনকিলাব লেখা হবে।
সব মনে রাখা হবে,
সবকিছু মনে রাখা হবে।”
বিদায় স্বপ্নের “বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি”