অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের পর বাতিল হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ
বাংলাদেশের প্রশাসনে সব স্তরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করবে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। গত ৫ জুলাই চুক্তিতে চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছিল এই সদ্য সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শকের।
এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইজিপির পদটি সরাসরি আইন-শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। এখন অন্য সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে। এখন যেহেতু কোনো সরকার ফাংশনাল না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিবসহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুই ডজনের বেশি কর্মকর্তা বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। এসব কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা এসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং অন্য সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরানোর জন্য সোচ্চার হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতকে যে চরম উভয় সঙ্কটে ফেলেছে শেখ হাসিনা
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী—প্রশাসনের ৮৫ জন সচিবের মধ্যে ১৮ জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত। এর মধ্যে গেল জুন মাসে মুখ্য সচিবসহ অন্তত চারটি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়েছে। সবশেষ গেল ৪ জুলাই সিনিয়র সচিব মর্যাদায় সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির ‘প্রধান পরামর্শক’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে যারা:
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) মো. আখতার হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার ও জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত
এ ছাড়া রয়েছেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো. ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।
আরও রয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, সৌদি আরবে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, সংযুক্ত আরব আমিরাত নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর, রাশিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান, ইরাকে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ফজলুল বারী, ভুটানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শিব নাথ রায়, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিন্তে শাম্স, বিআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এএফএম গাউসুল আজম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান খুরশেদ আলম। এছাড়া বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টারদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হবে।