লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি দেওয়া অসম্ভব: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা প্রতিবছর দেশে লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি। তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা কোন দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি যদি কর্মসংস্থান করতে না পারি তাহলে এর মধ্যে এতগুলো বছর কেন বিনিয়োগ করব। এই বছরগুলোর সঙ্গে বাবা-মায়ের অর্থ ব্যয়, সকলের স্বপ্নসহ অনেক কিছুই জড়িত। যারা ট্রেড কোর্সে পড়ালেখা করেন তারা অনেক আগেই কর্মজীবনে চলে যায়। তারা অনেক ভালো রোজগার করে।
আজ শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এসএসসি ও এইচএসসির কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
এসময় ট্রেড কোর্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা দ্রুত কর্মজীবনে যেতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ সম্মানহানির ভয়ে অনেকে উপাচার্য হতে আগ্রহী হন না: শিক্ষামন্ত্রী
মন্ত্রী বলেছেন, ট্রেড কোর্সে থেকে কেউ চাইলে যেন অন্য শিক্ষায় যেতে পারে আমরা সেই পথ খুলে দেয়ার চেষ্টা করছি। এই ব্যবস্থা আগে ছিল না। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার যারা তারা আগে শুধু ডুয়েট এ বিএসসি করতে পারতো এখন তারা যাতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে তার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যে দেশ যত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়েছে, সে দেশ কারিগরি শিক্ষায় তত বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে সমাজে এক ধরনের সামাজিক টাবু আছে। সেই টাবু দূর করতে হবে।
ডা. দীপু মনি বলেছেন, জীবনের চলার পথে সবচেয়ে বেশি জরুরি যোগাযোগের দক্ষতা। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানে। কিন্তু তাদের যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি কি জানো? তারা বলতে পারে না। তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করতে পারে না। যোগাযোগের দক্ষতা গড়ে উঠছে না তাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও এগোচ্ছে না। যে কোনও বিষয়ে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করতে না পারলে, আমরা কোনও কিছু শিখতে পারবো না।’
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘সন্তানকে মানসিকভাবে চাপ দেবেন না। সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক অনেক জরুরি। বাচ্চা যখন স্কুল থেকে বাসায় আসবে তাকে জিজ্ঞেস করবেন না তুমি কত নাম্বার পেয়েছো? জিজ্ঞেস করবেন বাবা তুমি নতুন কী শিখেছো? আমাদের প্রত্যাশার চাপ বাচ্চাদের ওপর চাপিয়ে দেই। আমরা কেউ প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলাম, হতে পারিনি। আমার সন্তানকে প্রকৌশলী বানাতেই হবে। বাচ্চা হতে চায় কী চায় না সেটা, ওর ইচ্ছা আছে বা নেই, আমরা জানতেও চাই না। সেটা জানা দরকার মনে করি না। আমরা বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছি। বাচ্চাদের জীবনের শুরুতে, কোনও একটি স্কুলে ভর্তি না হতে পারায়, বাচ্চারা নিজেদের অপরাধী ভাবে। আমরা একবারও ভাবি না, বাচ্চাটার জীবনের শুরুতে মানসিকভাবে ভঙ্গুর করে দিচ্ছি। আমাদেরকে ভাবতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের (এসবিএসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে এসএসসি ২০ জন ও এইচএসসি ২৫ জনসহ মোট ৪৫ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় তাদের হাতে ক্রেস্ট এবং সনদপত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি।
ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, অর্থ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন, দফতর সম্পাদক কাওসার আজম ও কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহম্মদ নঈমুদ্দীন, কার্যনির্বাহী সদস্য মনির মিল্লাত, মোজাম্মেল হক তুহিন, কিরণ শেখ, এসএম মোস্তাফিজুর রহমান।