দেশে ২৬ লাখ বেকার, শূন্য পদ ৪ লাখ
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের তুলনায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশে বেকার ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষ। অর্থাৎ প্রায় ২৬ লাখ মানুষ কর্মহীন রয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যে সংখ্যাটি ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
দেশে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন থাকলেও সরকারি দপ্তরে তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান। চলতি বছরের শুরুতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও অধিদপ্তরে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের ২০২৩ অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার।
আরও পড়ুন: দেশে তিন মাসে বেকার বাড়ল ২ লাখ ৭০ হাজার
জরিপের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বেকারত্ব ছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। পুরুষের ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এর প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ফলাফল অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ। এ ছাড়া কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী বর্তমানে ৭ কোটি ১১ লাখ।
অন্যদিকে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪ কোটি ৬৩ লাখ। শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬১ দশমিক ৩৭। অর্থনৈতিক খাত অনুযায়ী কৃষিতে নিয়োজিত আছে ৩ কোটি ১৯ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২২ লাখ, সেবা খাতে ২ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এ ছাড়া দেশের যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৭৩ লাখ। শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ।
প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে।
দুই বছর ধরে সরকারি চাকরির পাশাপাশি সম্প্রতি বেসরকারি চাকরি খুঁজতে শুরু করেছিলেন নাহিদুজ্জামান লিটু নামে এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলছেন, শুরুতে তো সরকারি চাকরির চেষ্টাই করতাম। কিন্তু সম্প্রতি বেসরকারি চাকরির আবেদন করতে শুরু করেছিলাম। এক-দুইটা ইন্টারভিউ দিয়েছি। এর মধ্যেই তো সব আটকে গেল।
এদিকে, বাংলাদেশের ব্যাংক, বহুজাতিক বা বড় বেসরকারি কোম্পানিগুলো গত কয়েকমাস ধরে ব্যবসা না হওয়ায় কর্মী ছাঁটাই বা বর্তমান কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে কমে গেছে নতুন চাকরির বিজ্ঞাপনও।
বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক অমিত বণিক বলছেন, করোনাভাইরাসের ক্ষতি তো সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপরেই পড়েছে, আমাদের ওপরেও পড়েছে। আগের তুলনায় ব্যবসা অনেক কমে গেছে।
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের ব্যবসাটা আগের তুলনায় অনেক কমে আসছে, তাই নতুন করে কর্মী নিয়োগ আপাতত আগের মতো আর হচ্ছে না। বরং কাউকে কাউকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। কর্মী নিতে হলে, বেতনভাতা দিতে হলে সেজন্য তো ব্যবসা করতে হবে, আয় করতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ঠিক না হয়, ব্যবসা যদি ভালো না হয়, তাহলে তো আর কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই নতুন করে কর্মী নেয়া সম্ভব হয় না।
আর সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বেশিরভাগ সরকারি চাকরির পরীক্ষা নেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন। আর একেকটি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন বছর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির ৪৩ হাজার ৩৩৬টি, ২য় শ্রেণির ৪০ হাজার ৫৬১টি, ৩য় শ্রেণির ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮টি এবং ৪র্থ শ্রেণির ১ লাখ ২২ হাজার ৬৮টি পদ খালি রয়েছে।
আরও পড়ুন: বেকার তৈরির কারখানা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নিয়োগে এ রকম দীর্ঘসূত্রিতা দুঃখজনক। এতে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ।
জনপ্রশাসন সচিব কে এম আলী আজম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে আমরা সবগুলো মন্ত্রণালয়কে খালি পদগুলো দ্রুত পূরণের নির্দেশনা দিয়েছি। শিগগিরই সবাইকে নিয়ে একটি সভা করে এসব ফাঁকা পদ পূরণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস-২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে নারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ জন, যা মোট চাকরিজীবীর প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০১০ সালে ছিল ২১ শতাংশ। তিনি প্রথম শ্রেণির পদে নারীদের জন্য আলাদা কোটা না থাকলেও ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে নিয়োগে নারীদের জন্য ১৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা আছে।