‘হিন্দু হওয়ায় আমার রক্ত নেয়নি অসুস্থ আপুটি’

পার্থ বর্মণ
পার্থ বর্মণ

পার্থ বর্মণ। চাকরি করছেন জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশে। পড়াশোনা করেছেন রাজধানীর গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। সেখানে থেকেই কাজ করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ক্লাবে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। মানুষের জন্য রক্ত নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সোমবার বিরল এক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন পার্থ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়েছে।

পার্থ লিখেছেন, ঘটনাটা ২০১৭ সালের শেষের দিকে। মিরপুর থেকে সদরঘাটে অপরিচিত অসুস্থ (প্রেগন্যান্ট) এক আপুকে রক্ত দিতে যাই। ওখানে গিয়েই জানতে পারি আপুর পরিবার উচ্চশিক্ষিত। শুধু তাই নয়, তার স্বামীও ভালো চাকরি করেন। যাই হোক, রক্ত দেওয়ার জন্য প্রায় এক ঘন্টা বসে থাকি হাসপাতালে। এরপর যা ঘটলো তা রীতিমত চোখ কপালে উঠার মতই বলা যায়। তারা আমাকে জানালেন, আমি হিন্দু তাই আমার রক্ত নেয়া হবে না। ঈশ্বর আপুকে সুস্থ রাখুন, এই বলে চলে আসি হাসপাতাল থেকে।’ পার্থ জানে না, গর্ভবতী সেই আপুটির পরবর্তীতে কী হয়েছিল? দুনিয়াতে কীভাবে এসেছিল তার নবজাতক সন্তান? 

জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে পার্থ বর্মণ বলেন, বাঙালির মধ্য থেকে অন্তত বেসিক এই বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়া উচিত। তা না হলে আমরা বাঙালি হলাম কী করে? 

ঘটনা-২: রক্ত দিতে গিয়ে বিরল ওই অভিজ্ঞতারকিছুদিন পর আশরাফ স্যার ফোন দিয়ে বললেন, ‘পার্থ রক্ত দরকার। স্যারের বোন মিরপুর ১০-এর আজমত আলি হাসপাতালে ভর্তি তখন। মাত্রই কয়েকদিন আগের ওই অভিজ্ঞতার জন্য প্রচন্ড ইতস্তত হয়ে কাঁপা কন্ঠে কাছে গিয়ে বললাম, ‘স্যার আমি কিন্তু হিন্দু....’ স্যার পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘ধুর পাগল আমরা মানুষ, আমরা বাঙালী। স্যারের কথায় নিজেকে আবারো মানুষ ভাবা শুরু করি।

ঘটনা-৩: ২০১৮ সালের জানুয়ারি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতীপুজা আয়োজনের সময় আফজাল স্যারের সাথে কথা বলতে যাই। স্যার আমাদের কাছ থেকে পুজার কথা শুনে প্রচন্ড খুশি হন। এরপর পরিচয় করিয়ে দেন চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর সাথে; যাতে উনি আমাদের পুজায় সেলিব্রেটি গেস্ট আনতে হেল্প করতে পারেন। সেবার পুজাতে মুসলমান হয়েও আফজাল স্যার ও রাজু স্যার যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা ভোলার নয় কখনোই।

ঘটনা-৪: ছোটবেলায় রোজার ঈদে বাবার বন্ধু আবেদ চাচার বাসায় আমাদের পুরো পরিবারের দাওয়াত ছিলো। আমাদের জন্য রাজহাস রান্না হয়েছিলো চাচার বাসায় সেদিন। কিছুদিন পর দূর্গাপুজায় আবেদ চাচার পুরো পরিবার আমাদের বাড়িতে এসে নাড়ু খেয়েছেন।

ঘটনা-৫:  এখন চলছে ২০১৯ সাল। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসেও বলা হচ্ছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙ্গালীর ঐতিহ্য নয়, এটা নাকি হিন্দুদের অনুষ্ঠান। এই শোভাযাত্রায় যাওয়া হারাম। আমি বলি, ধর্ম পরিবর্তন করে আপনি, আমি অন্য ধর্মের হয়ে যেতে পারবো। কিন্তু বাঙ্গালিত্ব কি পরিবর্ত ন করতে পারবো? হতে পারবো ইংরেজ কিংবা ফ্রেন্স হতে?

যদি বাঙালিত্বের চেয়ে ধর্মই বড় হয়, তবে আমি বলবো, এখনো আমরা পশ্চিম পাকিস্তান হয়েই থেকে যেতাম। কিন্তু আমরা বাঙালী হতে চেয়েছিলাম বলেই এখন আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশে বসে বাংলা ফন্টে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারেন। কোন ধর্মই এতো ঠুনকো নয় যে, একটা শোভাযাত্রা হলেই সব শেষ হয়ে যাবে। আপনার যেহেতু পছন্দ নয়, সেহেতু আপনি সেটা থেকে দুরে থাকুন। ব্যাস হয়ে গেল। যে যেটা চায়, তাকে সেটা করতে দিন।

সত্যি কথা বলতে কী, স্বাধীনতা সবাই চায়। এটার উপর নিয়ন্ত্রণ আসলেই যত সমস্যা....

আলাপকালে পার্থ বললেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও বাঙালি তার মূল জায়গায় ফিরতে পারেনি। যত দ্রুত সম্ভব বিষয়গুলোর সমাধান দরকার। তা না হলে তো আমাদের বাঙালিত্বই হারিয়ে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ