কেমন ছিল এবারের বইমেলা
অমর একুশে বইমেলার শেষ দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। করোনার কারণে বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যেই এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে এই মেলা আয়োজন করার রীতি থাকলেও মাসের মাঝামাঝিতে এসে আরম্ভ হয় এ মেলা। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এরপর সময় বাড়িয়ে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানায় বাংলা একাডেমি।
এবার বইমেলা ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলেছিল। এবারের মেলায় মোট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। যা গেল বছরের তুলনায় প্রায় ১৭ গুণ বেশি।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) মেলার শেষদিনে প্রচুর দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত ছিল পুরো মেলা প্রাঙ্গন।মেলায় আগত দর্শনার্থীরা প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে মেলা প্রাঙ্গনে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
আরও পড়ুন: আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণদ্বার: প্রধানমন্ত্রী
তবে এবারের মেলায় বেশকিছু প্রকাশনী জানিয়েছে, দুপুরের দিকে পাঠকদের সমাগম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু গতকাল বিকালে সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়, বিকেল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লোকারণ্য হয়ে যায় সম্পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণ।
বিপনন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেলায় গত বছরের চেয়ে বিক্রি ভালো হয়েছে। প্রতিবারই শেষের সপ্তাহে বিক্রি সব চেয়ে বেশি হয়। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বিক্রি অনেক বেশি হয়েছে। কিন্তু নবীন লেখকদের নতুন বই একেবারে চলেনি। শুধুমাত্র পরিচিত লেখকদের বই বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানান তারা।
তাম্রলিপি প্রকাশনীর স্টল ইনচার্জ জোবায়ের আহমেদ জানিয়েছেন, “অন্যান্যবারের মতই এবারও মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় পাঠক ছিল কম। অর্থাৎ যারা বই কেনেন তারাই মূলত পাঠক।”
আরও পড়ুন: বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুলেছেন ক্যামিলা ক্যাবেলো
তিনি কিছুটা হতাশা নিয়ে বলেছেন, “সেই পাঠকই কম ছিল এবারের স্টলে। এবছর মেলায় তাদের স্টলে নতুন বই এসেছে মোট ৬৬টি। যার বেশির ভাগেরই খুব একটা কাটতি ছিল না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা জনপ্রিয়, যাদের ভক্ত ও অনুসারী বেশি তাদের বই এবারের মেলায় বেশি বিক্রি হয়েছে।” তাছাড়া পরিচিত লেখকদের বইও ভাল বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রথমা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক জাকির হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, “শুরু থেকেই বইমেলা ভাল চলছে, বিক্রিও ভাল ছিল এবং লোকসমাগমও ভাল ছিল। বইমেলার সময় বাড়ানোর পর বিক্রি কিছুটা কমে গেছে তবে আজকে তা আবার বেড়েছে। অন্যান্য বছর সাধারণত মেলার শেষের দিকে প্রচুর ক্রেতা আসেন। বই বেশি বিক্রি হয়।”
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান কাজল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, “এবারের মেলা বেচাকেনার দিক থেকে ভালই ছিল। আজকে মেলার শেষ দিন, সরকারি ছুটির দিন ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বেচাকেনা বেশি হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সেই তুলনায় কিছুটা কম হলেও ভালই চলছে এবারের মেলা। সন্ধার পর লোকজন আসেন বেশি তাই এখনও অপেক্ষায় আছি।”
আরও পড়ুন: বইমেলায় নতুন বই ৩ হাজার ৪১৬টি, বিক্রি ৫২ কোটি টাকা
এদিকে, বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. জালাল আহমেদ জানিয়েছেন, এবারের মেলায় গেল বছরের তুলনায় অনেক বেশি বই বেচাকেনা হয়েছে। মেলায় একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে ৩৫টি প্যাভিলিয়নসহ ১০২টি প্রতিষ্ঠানের ১৪২টি স্টল বসেছে। অন্যদিকে মেলার বর্ধিত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানের ৬৩৪টি ইউনিটে মোট স্টল বসে।
মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার জানিয়েছেন, এবারের মেলায় এসে তার খুব ভাল লাগছে। গত বছর করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় হল ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হয়েছিল তাই মেলায় ওইভাবে আসতে পারেননি। কিন্তু এবারের মেলায় তিনি এ নিয়ে দুইবার এসেছেন। তার হাতে মাওলা ব্রাদার্সের বই শহরনামা নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, এবারের বইমেলার ৩৮তম আসরটি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পদক প্রদান করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।