বসন্তের ঢেউ বইমেলায়

বুধবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণের ছবি
বুধবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণের ছবি  © সংগৃহীত

প্রকৃতির বুকে বসন্তের আগমন ঘটেছে। আর তার ঢেউ লেগেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়ও। বুধবারের মেলার বেশিরভাগ দর্শনার্থী এসেছেন বাসন্তী সাজে। তরুণীরা খোঁপায় ফুল ও লাল-বেগুনি শাড়ি পরে মেলায় এসেছিলেন। ছেলেরা এসেছেন পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে। অনেকে পরিবারসহ মেলায় এসেছেন বসন্তের সাজে। কেউ এসেছেন বই কিনতে, কেউবা এসেছেন ঘুরতে। বিকেল তিনটায় মেলার দ্বার খুলার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ভিড় ছিল উল্লেখ করার মতো।

বৃহস্পতিবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বসন্তের প্রকৃতিতে আজ ভালোবাসার দিন। চিরচেনা প্রেম ভিন্নরূপে ধরা দেবে প্রিয়জনের কাছে। রাগ-বিরাগ-অনুরাগ ভুলে একীভূত হবে দুইটি হাত। কপোত-কপোতিরা সারাদিন ঘুরে বিকালে এসে জড়ো হবেন একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে। নিজের প্রিয় বইটি কেউ কেউ তুলে দেবেন প্রিয়ার হাতে। সন্ধ্যা নাগাদ জমবে আড্ডা, চলবে রাত অবধি। আজ ভালোবাসা দিবসকে উপলক্ষ করে প্রকাশিত হবে বেশকিছু ভালোবাসার বই।

বুধবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বেলা তিনটায় মেলার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গনে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। বসন্ত বরণ উৎসব আর অমর একুশে গ্রন্থমেলা; বুধবারের মেলায় এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। সঙ্গেই এদিন প্রায় সবাই নিজেদের রাঙিয়েছে লাল, হলুদ অথবা বাসন্তী আমেজে। মেয়েদের খোঁপায় ফুলের মঞ্জুরি, মাথায় ফুলের টায়রা, হাতভর্তি রেশমি চুড়ি। তরুণরাও হলুদ পাঞ্জাবিতে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে বেশ। আর শিশুদের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্করাও সেজেছেন প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গনে আহসান শুভ্র নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী বলেন, কালকে তো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাই প্রিয়জনকে গিফট দেয়ার জন্য একটা বই কিনতে মেলায় এসেছি। বান্ধবীদের সঙ্গে মেলা এসেছিলেন ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্রী আয়েশা তারান্নুম। তিনি বলেন, সকালে বান্ধবীদের সঙ্গে বের হয়েছিলাম কলেজের বসন্ত উৎসবে আসবো বলে। ওটা শেষ করে চলে আসলাম গ্রন্থমেলায়। এক ঢিলে দুই পাখি মারা আরকি!

অন্যদিকে, বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দর্শনার্থীর ভিড়ে এদিন বেচাবিক্রিও ভাল ছিল। চন্দ্রাবতী প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আরাফাত হোসেন বলেন, বসন্ত উৎসব উপলক্ষে ভালোই চলছে বেচাবিক্রি। বাঙালির নিজস্ব উৎসব বলে এদিন অনেকেই ঘুরতে মেলায় ছুটে এসেছেন। এসে শুধু বই দেখেই সময় কাটাননি, ঘরে ফেরার পথে বইও কিনেছেন।

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চ: বুধবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবি রফিক আজাদ : শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা, কবি ফারুক মাহমুদ এবং কবি জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন শহীদ ইকবাল, মণিকা চক্রবর্তী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারুক সুমন এবং আহম্মেদ শরীফ।

সন্ধ্যায় কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ এবং টোকন ঠাকুর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম এবং নাসিমা খান বকুল। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মিজান মাহমুদ রাজীব, ফারহানা শিরিন এবং তানজিনা করিম স্বরলিপি। নৃত্য পরিবেশন করেন সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানি’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন অনির্বাণ সরকার (তবলা), সুভেল খান শিশু (কী-বোর্ড), শফিজুল আখন্দ পাপ্পু (অক্টোপ্যাড), মো. আনিসুর রহমান খান (গীটার) এবং রাশেদ হোসেন (গীটার)।

নতুন বই: বুধবার মেলার ১৩ম দিনে নতুন বই এসেছে ১৭২টি। এর মধ্যে-গল্প ২৬টি, উপন্যাস ২৭টি, প্রবন্ধ ১৭টি কবিতা, ৬৩টি, ছড়া ২টি, শিশুসাহিত্য ৭টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ ২টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ৪টি, ইতিহাস ২টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১টি, অনুবাদ ২টি এবং অন্যান্য ১৪টি।

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানসূচি: বৃহস্পতিবার গ্রন্থমেলার ১৪তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বিজ্ঞানভাবনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রেজাউর রহমান, আবদুল কাইয়ুম এবং অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


সর্বশেষ সংবাদ