আলীম হায়দারের ‘স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস’: প্রি-অর্ডারেই শতাধিক বিক্রি
কবিতার বইয়ের বিক্রি এমনিতেই কম, তারমধ্যে করোনা মহামারির কারণে বইমেলার জমজমাট অবস্থাও নেই। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যেও অনলাইন বিপণন মাধ্যমে শতাধিক কপি কবিতার বই বিক্রি হওয়ার সংবাদ একটি আশাব্যঞ্জক ঘটনা। তিন বছর পর প্রকাশিত কবি আলীম হায়দারের নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস’ পাঠকমহলে শুরুতেই বেশ সাড়া জাগিয়েছে। করোনাকালীন সময়ে লেখা কবিতাগুলোর ভেতর থেকে নির্বাচিত ৪০টি কাব্য নিয়ে কবি সাজিয়েছেন এই গ্রন্থটি।
কাব্যের বিষয়বস্তুর বিষয়ে কবি আলীম হায়দার বলেন, ‘প্রতিটি কবিতাই করোনাকালীন মনস্তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। সচেতনে বা অবচেতনে ঘুরে ফিরে মানব মনের দর্শন ও প্রকৃতির দৃশ্যায়নই উঠে এসেছে এসব কবিতায়। কবিতার অর্থ জনে জনে আলাদা। পাঠকের চিন্তাশক্তির গভীরতার ওপরেই নির্ভর করে এর মূল্যায়ন। তাই একবার লিখে প্রকার করার পর সেখানে লেখকের আর কিছু বলার বা করার থাকে না, অর্থ নির্মিত করবে পাঠক ও সমালোচকরা।’
২০২২ সালের জাতীয় গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বইটি প্রকাশ করেছে অগ্রদূত অ্যান্ড কোম্পানি। প্রচ্ছদ করেছেন আইয়ুব আল আমিন।
প্রচারণা ও বাজারজাতের ব্যাপারে কাব্যগ্রন্থের প্রকাশক মনি মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘সাধারণত যাচাই-বাছাইয়ের পরেই কোনো লেখকের বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেই আমরা। বইটি প্রকাশের শুরু থেকেই ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রি-অর্ডারেই রকমারি ডটকম ও অগ্রদূতের অনলাইন বিপণনের মাধ্যমে শতাধিক কপি বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু অর্ডার আসছে। কবিতার বই হিসেবে ফিডব্যাক ভালো।’
আরও পড়ুন: বইমেলায় আসছে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী রাকিবের ‘প্রথম উৎসর্গ’
তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু করোনার কারণে বইমেলা পিছিয়ে গেছে এবং সংক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই আমরা প্রচারণা ও বিক্রির জন্য অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করে মানুষের ঘরে ঘরে বই পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
এদিকে কাব্যগ্রন্থটি পাঠের পর পর্যালোচনাও করেছেন বেশ কয়েকজন। মূলধারার গণমাধ্যম ও ফেসবুকে অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কবি আলীম হায়দারের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা গেছে ভক্তদের উচ্ছ্বাস।
আমেরিকা প্রবাসী যোগাযোগ বিষয়ক শিক্ষক ও গবেষক ফরচুন শামীম বইটির পর্যালোচনায় লিখেছেন, ‘কবি আলীম হায়দারের কবিতায় আরো ফুটে উঠেছে কারখানায় কাজ-করা শ্রমিক, দিনমজুর, গার্মেন্টেসের নারী শ্রমিকদের কথা। পুঁজিপতি মালিকের নোংরা মানসিকতার কথা। অথচ এই দুঃসময়ে কী দারুণ শক্তি নিয়ে টিকে আছে শ্রমজীবী মানুষ, যেন বেঁচে থাকাটাই একমাত্র সার্থকতা।’
আরও পড়ুন: পুরো জীবনের সঞ্চয়ে ২ লাখ বইয়ের পাঠাগার বানালেন অধ্যাপক
বইটি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং নিমগ্ন চিত্তের পাঠক হিসেবে ক্যাম্পাসে সুপরিচিত মো. হাফিজ আহমেদ নয়ন তার পর্যালোচনায় লিখেছেন, 'সমকালের অন্যতম প্রাসঙ্গিক কবি আলীম হায়দারের ‘স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস’ কাব্যগ্রন্থটি ৪০টি ঝরঝরে কবিতায় সাজানো হয়েছে। আমার মনে হয় ইচ্ছে করেই প্রতিটি কবিতার আলাদা নাম দেওয়া হয়নি, ‘স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস’ শিরোনামই প্রতিটি কবিতাকে শিরোধার্য করেছে, গ্রন্থের সব কবিতায় একটি ভাবধারাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। মনে হয়েছে: আবেগের প্রকাশ প্রকৃতির স্পর্শে এক অপূর্ব নিস্তব্ধতার কাছে চলে গিয়েছে।’