জন্মদিনের কেক কাটতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সদ্য বিলুপ্ত আশরাফুল হক হল ছাত্রলীগের সদস্যদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। জন্মদিন উদযাপনকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে হলের ১২৩ নম্বর কক্ষের সম্মুখে এই ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক সারোয়ার জাহান শাওন, আসিফ ইফতেখার ইফতি এবং বাকৃবি কেন্দ্রীয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য মোহাম্মদ উল্লাহ রনি আহত হন।
শাওন ও ইফতিকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে শাওনের মাথায় দুই জায়গায় ছয়টি সেলাই ও ইফতির চোখের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাবি, বাকৃবি ও বুয়েট
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আশরাফুল হক হলের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয়ের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এতে ৩ জন আহত হয়।
আহত সারোয়ার জাহান শাওন বলেন, হলের এক ছোটো ভাইয়ের জন্মদিন ছিল। আমরা ৫-৬ জন সিনিয়র মিলে জন্মদিন পালন করার জন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডেকেছিলাম। কিন্তু জুনিয়ররা এসে আমাদের সাথে জন্মদিন করবে না বলে কথা কাটাকাটি করতেছিল। এসময় মাঝে মাঝেই তারা আমাদের সিনিয়রদের উপর ঝাপিয়ে পড়তেছিল। আমরা ওদেরকে ফিরানোর জন্য চেষ্টা করছিলাম।
আরও পড়ুন: বাকৃবি ছাত্রলীগ: দুই বছর মেয়াদী কমিটি শেষ হয়নি ৬ বছরেও
শাওন আরও বলেন, এরপর কয়েকজন জুনিয়র ১২১ নম্বর রুমে যায়। সেখানে অনেক দেশি বিদেশি অস্ত্র ছিল। ওই সময় আজহারুল ইসলাম (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক), মেহেদি, তামিম মাহমুদ আকাশ (সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক) ওইখান থেকে লাঠি আর চেইনের দুইপাশে রডের দন্ড আছে এমন অস্ত্র (চেইন হুইপ) দিয়ে তেড়ে আসে। এসময় আমার মাথায় আঘাত করা হয়। আঘাত লাগার আগে চেইনটা আকাশের হাতে ছিল।
তবে অভিযোগের বিষয়ে তামিম মাহমুদ আকাশ জানায়, ‘‘আমাকে একা দোষারোপ করলে হবে না। সেখানে সবাই ছিল। তারা আমার লেভেলের ইফতির গায়ে হাত দেওয়ার পর আমরা স্বাভাবিকভাবে তো বসে থাকবো না। পরে মারামারি হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: এবার বিষয়ভিত্তিক র্যাংকিংয়ে দেশসেরা বাকৃবি
অন্যদিকে ইফতি বলেন, হৃদয়ের জন্মদিন উদযাপনের জন্য ১ম বর্ষ এবং ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডাকলে তারা যেতে অস্বীকৃতি জানালেও তাদের জোর করে গেস্টরুমে আটকে রাখা হয়। আমরা সেখানে তাদেরকে মুক্ত করতে যাই। এরপর সেখানে কথা কাটাকাটি ও এক সময়ে বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় কেউ একজন আমার চোখে আঘাত করলে আমি আহত হই। কিন্তু কে আঘাত করেছে তা বুঝতে পারি নি। তবে সেখানে শাওন, রনি ও এ.কে. সৌরভ ভাই ছিল।
আশরাফুল হক হল ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান (পিয়াল) বলেন, যারা জুনিয়রদের থ্রেট দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য চেষ্টা করে তা মেনে নেয়া যাবে না। তারা অন্য হলের কাছে হল ইজারা দেয় এইগুলো তো মেনে নেয়া যায় না। আমরা চাই হলের মধ্যে একটা সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকুক কিন্তু তারা যদি না মানতে চায়, তা মেনে নেয়া যায় না। গত কালকে তারা যখন ছেলেদের চাপ দেয় তখন জুনিয়ররা সিনিয়রদের উপর চড়াও হয়ছিল। পরে আমি গিয়ে মিচুয়াল করে দিয়ে আসছি। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ছেলেদেরকে সরায় দিছি। কিন্তু এর পরে তারা আবার মারামারিতে জড়ায় পড়ে।
এ বিষয়ে আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সেখানে উপাস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। এরপর আহত শিক্ষার্থীদের দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আমরা খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে কোন অভিযোগ এখনও আমরা পাইনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব। তবে যতটুকু জানি হল থেকে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।