মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থেকেও ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা
কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকার প্রথম দিকে থেকেও ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সাথে মেধাক্রমে এগিয়ে থাকার পরও শিক্ষার্থীদের অনেক দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বাধ্য করারও অভিযোগ উঠেছে। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে কর্ণপাত করছে না পরীক্ষা আয়োজক কমিটি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় প্রবাসী কোটায় ১০টি আসন রয়েছে। এই ১০টি আসনই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি আবেদনের সময় প্রবাসী কোটায় টিক দেওয়ায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন ২০ শিক্ষার্থী। এছাড়া মেধাক্রমে ভালো অবস্থানে থেকেও নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দক্রম দিতে পারছেন না। যদিও ভর্তি নীতিমালার কোথাও প্রবাসী কোটায় টিক দিলে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি করা হবে না এটি উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে বড় আন্দোলনের আভাস
তাদের অভিযোগ, কোটা ব্যবহার করা হয় কোনো শিক্ষার্থী যদি সাধারণ মেরিটে সুযোগ না পায় তার ক্ষেত্রে। তবে কৃষি গুচ্ছে মেধা তালিকায় সুযোগ পেয়েও তাকে কোটায় ভর্তি হতে হচ্ছে। দেশর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আগে সাধারণ মেধায় চান্স পেয়েছে কিনা সেটি দেখা হয়। অথচ কৃষি গুচ্ছে যারা কোটায় টিক দিয়েছে তাদের সাধারণ মেধা তালিকা না দেখে কোটায় ভর্তি হতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে করে মেধা তালিকায় ভালো অবস্থানে থেকেও অনেকে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের নিয়ম হচ্ছে কেউ যদি কোটায় আবেদন করে থাকে তাহলে তাকে কোটাতেই ভর্তি হতে হবে। ভর্তি নীতিমালায় এটি উল্লেখ করার দরকার নেই।
আরও পড়ুন: গুচ্ছে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ দিতে চান অধিকাংশ উপাচার্য
কোটায় টিক দেওয়ায় মেধা তালিকায় ভালো অবস্থানে থেকেও ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী— এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। বিষয়টি দেখতে হবে। আপনি গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করুন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কোটার আগে সাধারণ মেধাক্রম দেখা হয়। কোনো শিক্ষার্থী যদি সাধারণ মেধা তালিকায় চান্স পেয়ে যায় তাহলে তার ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করা হয় না। মেধায় সুযোগ না হলে পরবর্তীতে তার কোনো কোটা আছে কিনা সেটি দেখা হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আগে সাধারণ মেধা দেখা হয়। কেউ যদি মেধায় সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে তার ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করা হয় না। মেধায় সুযোগ না পেলে পরবর্তীতে কোটা দেখা হয়।
আরও পড়ুন: ‘শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়া উচিত’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২১৪৬তম স্থান অধিকার করা শিক্ষার্থী আবেদনের সময় প্রবাসী কোটা টিক দেওয়ায় তাকে প্রবাসী কোটার অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। এতে করে ওই শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন শেষ হতে চলেছে। শুধু ওই শিক্ষার্থীই নন; মেধা তালিকায় প্রথম ৩৫০০ এর মধ্যে থেকেও প্রবাসী কোটার জন্য অপেক্ষমান তালিকায় চলে গেছেন ২০ শিক্ষার্থী। যাদের প্রত্যেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে।
সূত্র জানায়, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় আরাফাত নামে এক পরীক্ষার্থী ১০৮তম স্থান অধিকার করেছেন। তবে ভর্তির সময় প্রবাসী কোটায় টিক দেওয়ায় তাকে প্রবাসী কোটায় ভর্তির জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। একই অবস্থা ৬৮৫ মেধাক্রমে থাকা তাফহীমুল ইসলামসহ আরও ৮ শিক্ষার্থীর। এদের প্রত্যেকেই মেধা তালিকায় ভালো অবস্থানে থেকেও নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না।
কৃষি গুচ্ছের এমন সিদ্ধান্তকে অমানবিক জানিয়ে এক ভর্তিচ্ছুর অভিভাবক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেধা তালিকায় চান্স পেয়েও আমার সন্তান তার পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করতে পারছে না। মেরিট পজিশনে ভালো অবস্থানে থেকেও তাকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ইউনিটে ভর্তি হতে হবে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিয়ম নেই। তাহলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এই নিয়ম থাকবে।
আরও পড়ুন: এইচএসসিতে বায়োলজি পরীক্ষা না দিয়েও মেডিকেলে আবেদনের সুযোগ
আরেক অভিভাবক জানান, কৃষি গুচ্ছে শুধু প্রবাসী কোটা নয়; সব কোটাধারীদের ক্ষেত্রেই এই অমানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোটা মানে সুবিধা। কোটা মানে তো সাধারণ মেরিট নষ্ট করা না। কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়, তাহলে কোটা ব্যবহারের কারণে কি সে প্রথম হওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে? তাহলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রবাসী কোটা কেন রাখা হয়েছে। এদেরকে সম্মান জানিয়ে সুবিধা দেওয়ার মানে কি এই যে তার ছেলেমেয়ে প্রথম হলে তাকে সেই প্রথম হওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে।
এদিকে কৃষি গুচ্ছের এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তাদের মতে, একজন শিক্ষার্থী মেধায় এগিয়ে থাকলে তাকে মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি করতে হবে।
আরও পড়ুন: মার্চ-এপ্রিলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের চিন্তা
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি কমিটির এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়। কেননা একজন শিক্ষার্থী যদি মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকে তাহলে সে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হবে। এটাই নিয়ম। কৃষি গুচ্ছ কর্তৃপক্ষ সেটি না করে তাদের বানানো নিয়ম শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এটি অন্যায়।
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, তারা যেহেতু ভর্তি আবেদনের সময় প্রবাসী কোটায় আবেদন করেছে। এজন্য তাদের আবেদন কোটার আবেদন হিসেবেই গৃহীত হয়েছে। যেহেতু প্রবাসী কোটা একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। তাহলে তাদের সেখানেই ভর্তি হতে হবে।