কৃষকদের সম্পৃক্ততা ছাড়া কৃষি গবেষণা অপূর্ণ : বাকৃবি উপাচার্য
- বাকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৭ PM , আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৭ PM
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, কৃষকদের সম্পৃক্ততা ছাড়া কৃষি বিষয়ক যেকোনো গবেষণা পূর্ণতা পায় না। বাকৃবির গবেষণা কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য নিবেদিত, এবং তাদের মাধ্যমে গবেষণা মূল্যায়িত হয়। বাউ মিষ্টি আলু-৫ উদ্ভাবন করা হয়েছে কৃষকদের পুষ্টি ও আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে। আজকের চারা বিতরণের মাধ্যমে কৃষকরা এই গবেষণায় সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মাঠ গবেষণাগারে বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর চারা বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ফজলুল হক আরও বলেন, বাউ মিষ্টি আলু-৫ কম খরচে বেশি পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আর্থিক উন্নয়নের সুযোগ করে দেবে। কৃষকরা যদি সফলভাবে এই জাতের আলু উৎপাদন করতে পারেন, তাহলে জাতটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং এর পুষ্টিগুণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।
তিনি প্রস্তাব করেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে দুধ ও ডিমের পাশাপাশি মিষ্টি আলু বিতরণ করা উচিত, যা দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কৃষক ও খামারীদের উপকৃত করবে এমন গবেষণার সংখ্যা বাড়ানো দরকার, যাতে দেশের কৃষক ও জাতি আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রাশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. হেলাল উদ্দীন, ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের (সিআইপি) কান্ট্রি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. দেবাশীষ চন্দ এবং প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ.বি.এম আরিফ হাসান খান রবিনসহ শতাধিক কৃষক।
প্রধান গবেষক ড. এ বি এম আরিফ হাসান খান রবিন জানান, আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে ১০০ জন কৃষককে ১০০টি করে মিষ্টি আলুর চারা দেওয়া হয়েছে, যা ১ শতক জমির জন্য পর্যাপ্ত। আমাদের লক্ষ্য দ্রুত এই উন্নত জাতের আলু কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা আরও ২০ হাজার চারা বিতরণ করতে পারবো এবং এর পরবর্তী ধাপে আরও বেশি সংখ্যক চারা বিতরণ করা সম্ভব হবে।
বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর চারা হাতে পেয়ে কৃষক আব্দুল করিম বলেন, আমি বহুদিন ধরে আলু চাষ করছি, তবে এই জাতের আলু প্রথমবার শুনলাম। কম খরচে চাষ করা যায় এবং এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সহযোগিতায় আমি আশা করি ভালো ফলন পাবো এবং এই আলু আমাদের এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
প্রসঙ্গত, বাউ মিষ্টি আলু-৫ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত, যা সারা বাংলাদেশে চাষযোগ্য। এর জীবনকাল ৯০ থেকে ১০০ দিন। প্রতি গাছে চার থেকে ছয়টি কন্দ হয়, যার ওজন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। এতে গ্লুকোজের পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে ৭ দশমিক ৮ গ্রাম। কন্দের রং লালচে গোলাপি এবং শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম কন্দে ০ দশমিক ১৫ মিলিগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৩ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন এবং ১৫ মিলিগ্রাম ফ্যানোলিক উপাদান পাওয়া যায়।