নির্বাচনী ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বাকৃবি, উচ্চশব্দে চলছে শোডাউন

দিনরাত নির্বাচনী প্রচারণার মাইকিং ও উচ্চশব্দের গানে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এই উচ্চশব্দ পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের অন্তরায়।

নির্বাচনী ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাচনী ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ময়মনসিংহ বিভাগে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) চত্বরের আনাচে-কানাচ ভরে গেছে ব্যানার-ফেস্টুনে। একইসঙ্গে অনবরত মোটরসাইকেল, ট্রাক বোঝাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শোডাউন দিচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে উচ্চশব্দে মাইক বাজিয়ে এসব প্রচারণা করা হচ্ছে দিনরাত। এতে পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হওয়াসহ দৈনন্দিন চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটছে তাদের। প্রতিদিন এমন উচ্চশব্দে মাইক দিয়ে প্যারডি গান বাজিয়ে এবং মাইকিং করে প্রচারণায় তাদের ভোগান্তি এখন চরম পর্যায়ে। এতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভুগছেন মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যায়।

বিষয়টি জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসকের কাছে সমস্যাটির কথা তুলে ধরা হবে। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। -মো. আলমগীর কবীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, দিনরাত নির্বাচনী প্রচারণার মাইকিং ও উচ্চশব্দের গানে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। অনেক বর্ষেই চলছে ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা। আবার অনেকের সামনে চাকরির পরীক্ষাও রয়েছে। এমতাবস্থায় এই উচ্চশব্দ পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের অন্তরায়।

তারা বলেন, অনবরত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এমনকি ট্রাক ভর্তি করে প্রবেশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ক্লাসরুম এমনকি মসজিদের সামনের সড়কগুলো দিয়ে তারা শোডাউন ও মিছিলের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কার্যক্রমে সড়কগুলোতে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের ভোটার সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। শিক্ষার্থীরা বলেন, হাতেগোনা কয়েকজন ভোটারের জন্যে এমন প্রচারণা অর্থহীন। এটা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এটা মাথায় রেখে প্রার্থীদের প্রচারণা করা উচিত।

উচ্চশব্দে মাইক বাজানোর বিষয়টি শধু শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষকদেরও অসুবিধার কারণ। আমরা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একাধিকবার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। -অধ্যাপক হারুন, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে একজন অটোরিকশা চালককে মূলত ভাড়া করে মাইক বাজানোর কাজটি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কে যতগুলো এরকম অটোরিকশা এসেছে, সেগুলোর চালকদেরকে আবাসিক হল সংলগ্ন সড়কে মাইক না বাজানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রচারণার ক্ষেত্রে শোডাউন বা মিছিল করা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হল থেকে রোজী জামাল হল এলাকায় বিকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কোনোপ্রকার উচ্চ শব্দ ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, উচ্চশব্দে মাইক বাজানোর বিষয়টি শধু শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষকদেরও অসুবিধার কারণ। একাধিক প্রার্থী ও তাদের সমর্থক মিলিয়ে অনেক মানুষ জড়িত থাকায় বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একাধিকবার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

দিনরাত নির্বাচনী প্রচারণার মাইকিং ও উচ্চশব্দের গানে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এই উচ্চশব্দ পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের অন্তরায়। -ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের প্রচার ও প্রচারণা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। ক্যাম্পাসের মধ্যেও তাদের ভোটার আছেন, তাই তারা প্রচারণা করবেন। তবে আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি, দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বাদ্যযন্ত্রগুলো কম বাজাতে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে একাধিকবার কল করেও তার থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আলমগীর কবীর বলেন, আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসকের কাছে সমস্যাটির কথা তুলে ধরা হবে। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ