মার্ডার করলে ৬ মাস জেলে থাকবো, ক্যান্টিন ম্যানেজারকে ছাত্রলীগ নেতা
প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ
- শেকৃবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৭ PM , আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৭ PM
শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার মো. জাহিদকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এ হুমকি দেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সজিব হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান।
এসময় এক পর্যায়ে সভাপতি সজিব জাহিদকে হত্যার হুমকি দিয়ে জানান, তার এক ভাই খুলনার পাবলিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি মার্ডার কেসের আসামি এবং ৬ মাস জেল খেটেছেন। পরে আর কিছু হয়নি। তাকে (ক্যান্টিন ম্যানেজার) মারলেও তার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
বর্তমানে এ ঘটনায় জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন ক্যান্টিন ম্যানেজার মো. জাহিদ। চাঁদাবাজি থেকে রেহাই ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ক্যান্টিন ম্যানেজার। চাঁদাবাজির অপরাধে এর আগে ১৬ মাস ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন এই দুই নেতা।
লিখিত অভিযোগে জাহিদ জানান, গত ১৬ নভেম্বর রাতে নজরুল হলের ২২০নং কক্ষে যেতে বলেন সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান। তিনি ওই রুমে গেলে আরিফ তখন হল সভাপতি এসএম সজিব হোসাইনকে ফোন করে নিয়ে আসেন। সজিব এসে তাকে বলেন, “আপনার কারণে আমি ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলাম, ১৬ মাস আমরা বহিষ্কৃত ছিলাম, পরিবারের কারো সাথে দেখা করতে পারিনি।”
“তখন আমি বললাম, এটা তো আমার জন্য হয়নি, ডাইনিং ম্যানেজারের জন্য হয়েছিল। সজিব তখন বলল, এতো কথা বলার দরকার নেই, আপনি আমাদের দুই লাখ টাকা দেবেন, সেটা কবে দেবেন? আমি বললাম যে আমি কোনো টাকা-পয়সা দিতে পারব না। তখন সজিব বলল, আমি এসব বুঝি না, আমাকে যে বহিষ্কার করা হয়েছে এটার শোধ আমি নেব। সজিবের এক চাচাতো ভাই নাকি খুলনায় একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটির সেক্রেটারি, সে একজনকে মার্ডার করে মাত্র ৬ মাস জেলে ছিল। সুতরাং সেও মার্ডার করলে ৬ মাস জেলে থাকবে এছাড়া আর কিছু হবে না।”
লিখিত অভিযোগে জাহিদ আরও জানান, “আমি বললাম যে আমি টাকা দিতে পারব না। তখন সে আমাকে গালিগালাজ শুরু করে। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সে রুম থেকে বের হয়ে প্রায় দেড় হাত লম্বা একটা রামদা নিয়ে আসে। রামদা এনে আমি কবে টাকা দেব সেই ক্লিয়ারেন্স দিয়ে ঐ কক্ষ থেকে বের হতে বলে৷”
“এরপরও আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে সে আমাকে মারবে, কাটবে এমন বলতে থাকে। তখন আমি বলি, আমাকে সময় দেন, আমি চিন্তা করে দেখি। তখন সে আমাকে বলে ২০ তারিখের (নভেম্বর) মধ্যে আমাকে টাকা দিতে হবে৷ এরপর সে আমাকে জোর করে একটা স্বীকারোক্তি নেয় যে তারা আমার কাছে দুই লাখ টাকা পায়, আমি সেটা তাদের ২০ তারিখে আমি তাদের ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করব। স্বীকারোক্তিটা তারা ভিডিও করে নেয়। এই স্বীকারোক্তি দিয়ে আমি রাত দেড়টায় ঐ কক্ষ থেকে বের হই।”
এ বিষয়ে ক্যান্টিন ম্যানেজার জাহিদ বলেন, তাদেরকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হতো। মাঝে ১৬ মাস তারা বহিষ্কৃত ছিল, টাকা পায়নি সেজন্য ১৬ মাসের টাকা একসাথে দেওয়ার কথা বলে। আর তাদের বহিষ্কার করায় জরিমানা স্বরূপ আরও ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে। তাদেরকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় এবং প্রতিদিন তাদের জন্য ফ্রিতে খাবার পাঠাতে হয়।
এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি কোন অভিযোগপত্র পাইনি। তবে ঘটনাটি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে শুনেছি৷ আমরা অ্যাকশন নেয়ার চেষ্টা করছি। তার নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় নেবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এমপ্লয়ি না৷ আর এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হারুণ-অর-রশিদ বলেন, অভিযোগ পত্রটি পেয়েছি। প্রভোস্ট বিষয়টি আগে দেখবে। তারপর তিনি ফরওয়ার্ড করে দিলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান বলেন, তার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি। তাই চাঁদাবাজি কিংবা অস্ত্র ধরে ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্নই উঠে না। হলের খাবারের মান খারাপ হচ্ছে এজন্য প্রভোস্ট স্যার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাকে বলার জন্য। তার সাথে আমার রুমের বাইরে ১৬ তারিখ রাতে এ ব্যাপারে মাত্র ২ মিনিট কথা হয়। এর বাইরে কিছু না।
যোগাযোগ করা হলে ক্যান্টিন ম্যানেজারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সজিব হোসাইন জানান, তিনি এই মুহুর্তে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।