২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০

শুরুর আগেই শেষ অনেকের মেডিকেল ভর্তির স্বপ্ন!

চলতি বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছেন ভর্তিচ্ছুরা  © টিডিসি সম্পাদিত

ঝিনাইদহের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে স্থানীয় কলেজে ভর্তি হন মেয়েটি। এইচএসসিতেও ভালো ফলাফল করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। পরীক্ষার পর কোচিংয়েও ভর্তি হয়েছেন। তবে এইচএসসির ফলাফলের পর তার সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

আরও অনেকের মতো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করতে পারেননি এ ছাত্রী। এইচএসসিতে তার জিপিএ এসেছে ৪ এর নিচে। ফলে মেডিকেলসহ শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন আবেদন করতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই সংশয়ে আছেন তিনি। চলতি বছরের পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় হওয়ায় তার মতো অনেকেই উদ্বেগে রয়েছেন। এখন তারা ভর্তি আবেদনের শর্তে মোটার জিপিএ কমানোর দাবি তুলছেন।

২০২৫ সালে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার মাত্র ৫৭.১২ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম। প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাসই করতে পারেননি। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ব্যাপহ হারে কমেছে। ২০২৪ সালে ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন; ২০২৩ সালে ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন। এবারে তা কমে হয়েছে মাত্র ৬৩ হাজার ২১৯ জন।

জানা গেছে, মেডিকেলের এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৫ অনুযায়ী আবেদনের জন্য ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ পেতে হবে। আর জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে ৪। তবে এ শর্ত পূরণ করতে গেলে অনেক শিক্ষার্থী আবেদনেরই সুযোগ পাবেন না।

ইশরাত জাহান নামে এক শিক্ষার্থী রাজধানীর নামী একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.২৫ পেয়েছেন। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এবারের ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে আমাদের অনেকেই আবেদন করতে পারবে না। তাই আবেদনের যোগ্যতা মোট জিপিএ ৯ থেকে কমিয়ে ৮ করা হোক। এতে আমাদের অনেকে যোগ্যতা প্রমাণের জন্য অন্তত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাব।’

২০২৫ সালে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার মাত্র ৫৭.১২ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম। প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাসই করতে পারেননি। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ব্যাপহ হারে কমেছে। ২০২৪ সালে ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন; ২০২৩ সালে ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন। এবারে তা কমে হয়েছে মাত্র ৬৩ হাজার ২১৯ জন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবারের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৬ জন। পাশাপাশি মাদ্রাসার আলিম এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম ও ডিপ্লোমা ইন কর্মাস পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশ করা হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন বেসরকারি মেডিকেল সংশ্লিষ্টরাও। শর্তের কারণে তারা শিক্ষার্থী কম পাবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনও (বিপিএমসিএ) ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের শর্তে জিপিএ ৯ এর পরিবর্তে ৮ করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই সভা হতে পারে বলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমএন্ডডিসি) ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এমন দাবির বিষয়ে আমাদের জানা নেই। অধিদপ্তরের কোনও ফোরামেও আলোচনা হয়নি। তবে আলোচনা হলে তখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাবে।’

দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি আবেদনগ্রহণ শুরু হবে আগামী নভেম্বর মাসে। তবে আবেদন শুরুর তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সভা আজ, তারিখ কি নির্ধারণ হবে?

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের একটি সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছে। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিভাগের এক যুগ্ম-সচিব বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ভর্তি আবেদন শুরু হবে। ভর্তি নীতিমালায় খুব বেশি পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আরেকটি সভা হবে। ওই সভায় বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হতে পারে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এবার মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা একইদিন, একই প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হবে। সিলেকশন প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তা আগামী সপ্তাহের সভা শেষে বলা যাবে।’

গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সে তুলনায় এবারের পরীক্ষা মাসাধিককাল সময় এগিয়ে আনা হচ্ছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে পাঁচ হাজার ৩৮০টি এবং ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা ছয় হাজার ২৯৩টি। দেশে মোট ১১০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। 

এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারির বাইরে একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এক হাজারের বেশি আসন কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠেয় সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।