বৃত্ত ভরাট ভুলেই ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্নভঙ্গ
গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের প্রকাশিত ফলাফলে ৮৫ হাজার ৫৮২ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর আগে, বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকালে এই ফল প্রকাশিত হয়।
এদিকে ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় এক হাজার ৫৫১ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর খাতা বাতিল করা হয়েছে। মূলত তিনটি কারণে এসব খাতা বাতিল করা হয়।
এক হাজার ৫৫১ জন ভর্তিচ্ছুর মধ্যে ৩ জন ভর্তিচ্ছু বহিষ্কার হয়েছেন। এছাড়া রোল নম্বর এররের (Error) কারণে ২৯ ভর্তিচ্ছু এবং সেট/সাবজেক্ট কোড এররের জন্য এক হাজার ৫১৯ জনের খাতা বাতিল করা হয়।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘একটি মাত্র বৃত্ত ভরাট ভুলের কারণে এতোগুলো শিক্ষার্থীর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন এভাবে ভেঙ্গে যেতে পারে না। বিষয়টি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নয়, প্রশ্নটি ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমন হলে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব বহন করতো না। একজন ভর্তিচ্ছুর একসঙ্গে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীরা আরও বলছেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার কক্ষে একাধিক শিক্ষক থাকেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে তারা ছাত্রছাত্রীরা ভালোভাবে বিষয় কোড, স্বাক্ষর এবং আরও আনুষঙ্গিক জিনিস ভালোভাবে পূরণ করেছে কিনা তা দেখেন এবং এরপর খাতায় স্বাক্ষর করেন। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এক্ষেত্রে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির এই ব্যাপারে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।’
এদিকে এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যানুয়ালি উত্তরপত্র যাচাইয়ের দাবিও জানাচ্ছেন একাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।
বিজয় ঘোষ নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রে আমার উত্তরপত্র একজন শিক্ষিকা চেক করেছেন। এরপর সেটায় তিনি স্বাক্ষর করেছেন। আমি মোটামুটি ৬৮ এর অধিক নম্বর পেতাম। কিন্তু আমার পাবলিকে পড়ার স্বপ্ন তো এখন আমার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আমার মতো সেকেন্ড টাইমারদের জন্য। আমার রেজাল্ট তো দেখতে পাচ্ছি না। Status: Cancelled set/subject code error) দেখাচ্ছে।। আশা করি, গুচ্ছ কমিটি একজন শিক্ষার্থীর কষ্ট অনুধাবন করে এর একটা সুষ্ঠু সমাধান দেবেন।’
আরও পড়ুন : গুচ্ছের ‘ক’ ইউনিটের ফল পুনর্নিরীক্ষার সুযোগ থাকছে
সাকিব নামে আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জানান, 'এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু সাবজেক্টের ঘরের বৃত্ত ভরাট করা হয়নি। এজন্য আমার রেজাল্ট আসেনি। এই একটা বৃত্ত ভরাট আমার লাইফটাকে উল্টাপাল্টা করে দিয়েছে।’
এ ব্যাপারে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা নির্ভুলভাবে ফল তৈরি করেছি। আগামী ২০ আগস্ট গুচ্ছের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আলোচনা করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’
এদিকে গুচ্ছের ‘ক’ ইউনিটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১১ হাজার ৭১৬টি আসন রয়েছে। এক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় ৮৫ হাজার ৫৮২ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেও মোট ১১ হাজার ৭১৬ জন ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। সেই হিসেবে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ৭৩ হাজার ৮৬৬ জন ভর্তিচ্ছু গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না।
প্রসঙ্গত, গুচ্ছের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলে ৩০ নম্বরের সমান ও বেশি নম্বর পেয়ে ৫৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া ৩০ এর নিচে নম্বর পেয়ে ৬৬ হাজার ৭১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন।